ভালো সাবজেক্ট নাকি বিশ্ববিদ্যালয়—কোনটি বেশি জরুরি?
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভর্তিচ্ছুদের ইচ্ছা কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের সাবজেক্টে ভর্তি হয়ে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা যেমন সীমিত, তেমনি অধিক প্রতিযোগিতার ফলে পছন্দের সাবজেক্ট পাওয়া অনেক সময় হয়ে ওঠে না। তাই অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্ট পেয়েও যেমন হতাশায় ভোগেন, তেমনি পছন্দের সাবজেক্ট না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেড়ে অনেকে প্রাইভেটে কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন।
তবে সফলতার পেছনে ভালো সাবজেক্ট কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কতটা প্রভাব ফেলে, সেটাও ভাবায় শিক্ষার্থীদের। অনেকে মনে করেন, সফলতার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ই মূখ্য নয়। প্রাইভেট কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান থেকেও বর্তমানে চাকরির বাজার উপযোগী সাবজেক্ট নিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব। আবার অনেকে বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার পথ অনেকটা সহজ করে। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার পরিবেশ, লিংক আপ, প্রতিযোগিতা মূলক চিন্তাভাবনা-সবকিছু মিলে নিজের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ আলী বলেন, প্রতিযোগিতার এই সময়ে নিজ দক্ষতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। যার যে দক্ষতা, সে সেই দিকে ফোকাস করলে অবশ্যই সফল হবে। সেক্ষেত্রে পছন্দের সাবজেক্ট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ও। তবে অধিক প্রতিযোগিতার কারণে অনেক সময় সবাই একসাথে দুটো সুবিধা পায় না। কিন্তু তার মানে এই না, তার দ্বারা আর কিছু হবে না।
তিনি বলেন, এখন প্রাইভেট কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অনেক বিসিএস ক্যাডারসহ ভালো ভালো জায়গায় চাকরি করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৃহৎ পরিসর। এখান থেকে নিজ লক্ষ্য অর্জন অনেক সহজ হয়। তবে সফলতা পেতে উভয় ক্ষেত্রেই নিজের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বাড়ানো জরুরি।
রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবজেক্ট দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার মনে হয়, পছন্দের সাবজেক্ট বেশি জরুরি। কেননা দেশে বর্তমান চাকরির যে অবস্থা, তাতে পড়াশোনা শেষে কি করবে সেটাও অনেকবার ভাবতে হয়। দেখা গেছে, বেশ ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাধারণ কোনো সাবজেক্টে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে হতাশার জীবন কাটাচ্ছে, এমন ঘটনা অনেক।
অন্যদিকে প্রাইভেট কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো কোন সাবজেক্টে পড়াশোনা শেষ করে ভালো কিছু করছে, এমনটাও ঘটছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৃহৎ পরিসর। যেখান থেকে জ্ঞানের গভীরতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি নিজেকে সময় উপযোগী করার নানা উপায় তৈরি সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আলী বলেন, আমার মনে হয় সাবজেক্ট কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কোনটাই মেটার করে না। যে জিনিসটা দরকার সেটা হলো, উদ্যমী মনোভাব ও পরিশ্রম। সেটা যেকোনো প্রতিষ্ঠান ও বিষয়েই করা সম্ভব। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অনেকে বড় বড় জায়গায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। আবার দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও অনেকে চাকরির পিছনে হন্য হয়ে ঘুরছে। এরকম অসংখ্য নজির রয়েছে। তাই সাবজেক্ট বা ইন্সটিটিউশনের চিন্তা মাথায় না নিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করে যেতে পারলেই ভালো কিছু সম্ভব।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, নিজেকে কাঙ্ক্ষিত মানের করে গড়ে তুলতে ভালো সাবজেক্ট কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কোনটাই মেটার করে না। নিজের আত্মবিশ্বাস ও সময়ের সাথে নিজেকে উপযোগী করে গড়ে তোলার মাঝেই কেমল সফলতা নিহিত।
তিনি বলেন, যদি সাবজেক্ট কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ই মূল বিষয় হতো, তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে কেউ বিসিএস হতো না, আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কেউ গুগল কিংবা ফেইসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো না। অথচ বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী তা করছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ভালো সাবজেক্টে পড়ে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায়নি, অথচ নরমাল কোন সাবজেক্ট থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশের বড় আমরা হয়েছে এমন নজির অহরহ।
আরো পড়ুন: ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ফল তৈরির কাজ শেষ, শিগগিরই প্রকাশ
এই অধ্যাপকের মতে, সাবজেক্ট কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দিধাদ্বন্দ্বে না গিয়ে নিজেকে দক্ষ ও সময় উপযোগী করে গড়ে তোলার মাঝেই কেবল সফলতা-বিফলতা নিহিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র এমবিএ প্রোগ্রামের সমন্বয়ক ড. মো. রেজাউল কবির বলেন, এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকটি ওয়েটিং লিস্ট দিয়েও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এতে বোঝা যায়, চাকরিক্ষেত্রে যেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটিতেই তাদের আগ্রহ বেশি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে সাবজেক্টের বিষয়টিই বড় হয়ে উঠছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনেক ক্ষেত্রে সাবজেক্ট ম্যাটার করে না।
তিনি বলেন, কলা কিংবা সামাজিক বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বিষয়গুলো না থাকলে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভালো চিন্তা করার মানুষ কমে যাবে। এ কারণে এসব বিষয়ের মানোন্নয়নেও গুরুত্ব দিতে হবে।