দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগের দাবিতে সরব শিক্ষার্থীরা, যা ভাবছে কর্তৃপক্ষ
এক সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ ছিল। তবে সময়ের পরিক্রমায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ গতবার গুচ্ছে আসা ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: রাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার দাবি
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষায় কারা দিতে পারবে এবং কারা দিতে পারবে না এসব সিদ্ধান্ত স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এবং ভর্তি কমিটি নিয়ে থাকে। সেখানে যদি আলোচনা-পরামর্শে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ যদি প্রয়োজন না মনে করে তাহলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর যদি থাকার প্রয়োজন মনে করে তাহলে তারাও (সেকেন্ড টাইমার) ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারে। তবে একবার তাদের ‘না’ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে পরবর্তীতে আর বসার সুযোগ কমই থাকে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগের দাবিতে সমাবেশ
এদিকে, আসন্ন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে সরব হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে তারা শিক্ষামন্ত্রী এবং উপাচার্যের নিটক স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তাছাড়া মানববন্ধনও করেছেন তারা।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের কাছে এক স্মারকলিপি জমা দেন। তাতে শিক্ষার্থীদের উল্লেখ করেন, করোনাকালে তাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণের জন্য হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন তাদেরকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন পদ্ধতি রাখার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। সেই সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল করে নির্দিষ্ট জিপিএ অর্জনকারী সকল যোগ্য শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের অনুরোধ করেন তারা।
আরও পড়ুন: যে তিন কারণে বাতিল করা হয় ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ
তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, এটি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। কেননা বিষয়টি নির্ধারিত হবে আমাদের একাডেমিক কাউন্সিল এবং ভর্তি কমিটির সভায়। একক ভাবে এই বিষয়ে কিছু বলা সমীচীন নয়।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে কিনা সেটি বলা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতের কথা আমরা কেউ জানিনা।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ নিয়ে যা বললেন ঢাবি ভিসি
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীবার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ ছিল না। এর আগে ২০১৫ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। তখন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সেশনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং কেবল ২০১৬ সালে পাশকৃতরাই পরীক্ষায় বসে। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান উপাচার্যের দায়িত্বে এসে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পুনরায় চালু করেন। এরপর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাবর্ষে তা আবার বাতিল করা হয়।
শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, দেশে স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। রাজশাহী বাদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও দ্বিতীবার বসার সুযোগ নেই।
তবে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে সরব হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তারা। গত ৩০ ডিসেম্বর একই দাবিতে তারা ক্যাম্পাসে সমাবেশ করেন।
আরও পড়ুন: জাবিতে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ভর্তি কমিটির সভায়
শিক্ষার্থীরা জানান, যারা প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো বিষয় পায় না তাদের মধ্যে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মাথায় রেখে যুগোপযোগী বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পড়তে চাওয়াটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মতো নম্বর কর্তন করার বিধান রেখে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিতে পারে। এছাড়া যারা প্রথমবারেই চান্স পেয়ে ভর্তি আছে, তারা আর পরীক্ষা দিতে পারবে না এমন শর্ত দিয়েও ঢাবিতে সেকেন্ড টাইম পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: রাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নিয়ে যা বললেন ভিসি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের অন্য তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই। তবে কৃষি গুচ্ছের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ রয়েছে। তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গতবার ‘প্রকৌশল গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায়’ অংশ নিয়েছে। এসব হচ্ছে-চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখেনি।
তথ্যমতে, ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা একবারই সুযোগ পেয়ে আসছেন। এর আগে দুইবার করে সুযোগ পেতেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছিলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধসহ তিন কারণে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ বাতিল করেছেন তারা।
তবে এই সিদ্ধান্ত পুন:বিবেচনা করার সুযোগ আছে কিনা, এ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, অনেক গবেষণা করে ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। অনেকগুলো যৌক্তিক কারণে সেসময় এটি বন্ধ করা হয়। তাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটিই চূড়ান্ত। যেভাবে চলে আসছে আগামীতেও সেভাবেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সেকেন্ড টাইম থাকছে না
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০৫তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে আগামীতে এটি বহাল থাকবে কিনা, এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক বলেন, ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় বিষয় ঠিক হয় ভর্তি কমিটির সভায়। এখানে এককভাবে বলাটা সমীচীন হবে না। কেননা আমি একটি কথা বললাম পরে সেটি পরিবর্তন হয়ে গেল। এতে করে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। তাই এই বিষয়ে ভর্তি কমিটির সভার আগে কিছু বলা সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: ‘যদি গুচ্ছ থাকে, তবে অবশ্যই সেকেন্ড টাইম রাখতে হবে’
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বসে ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমবারের এই আয়োজনে শর্ত সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীবার বসার সুযোগ ছিল। তবে আগামী বছর থেকে আর এ সুযোগ থাকছে না বলে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আগামীবার থেকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আমরা সেকেন্ড টাইমারদের পরীক্ষা না নেওয়ার কথা ভাবছি। বর্তমানে সারাদেশে কোচিং বাণিজ্য চলছে। একজন সেকেন্ড টাইমার ফার্স্ট টাইমারদের চেয়ে এক বছর বেশি সময় পায়। এই এক বছর তারা ভর্তি প্রস্তুতি নিতে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। এসব কোচিং সেন্টারগুলোতে তাদের জালিয়াতি শিখানো হয়।
তবে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের সঙ্গে গুচ্ছের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দ্বিমত পোষণ করছেন। এ কারণে এখনও বিষয়টি ঝুলে আছে। আগামীতে ভর্তি কমিটির বৈঠকে বসে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যরা এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।