ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছ পদ্ধতিতেই অনড় সরকার

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ফটো

চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতেই নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় সরকার। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য।

এর আগে সম্প্রতি গুচ্ছ পদ্ধতিতে অনিচ্ছুক পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এতে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘একাডেমিক কাউন্সিল’ এবং ‘সিন্ডিকেটে’ বক্তৃতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আর এভাবেই
শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা বিবেচনায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে একই পদ্ধতিতে আনতে যাচ্ছে সরকার। ‍

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার প্রস্তাব বহুদিন ধরেই আছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চারটি এবং বুয়েট বাদে বাকি ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এ (গুচ্ছ) প্রক্রিয়ায় ভর্তির ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এর আগে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু ওই প্রস্তাব ইউজিসির বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে নাকচ হয়ে যায়। ফলে ‘সরাসরি অংশগ্রহণ পদ্ধতি’র পরীক্ষার পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে গুচ্ছবদ্ধ করে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর চেষ্টা চলছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর চেষ্টা জোরেশোরে শুরু হয়। কিন্তু প্রত্যেক বৈঠকেই ভিসিরা বিশেষ করে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা শিক্ষামন্ত্রীর সামনে সরাসরি প্রস্তাব ‘নাকচ’ না করে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে আলোচনা করে পরে জানানোর কথা বলেন। এরপর আর না জানিয়েই ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে দেয়ার ঘটনা আছে। এভাবে এক যুগ কেটে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ সময়ের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২ বছর আগে ভিসিদের সঙ্গে বৈঠকে এ পদ্ধতির পরীক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এরপর ৭ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছবদ্ধ হয়ে গত বছর ভর্তি করিয়েছে। এ বছরের গোড়ার দিকে এ নিয়ে ফের উদ্যোগে ৩৪টি একমত পোষণ করেছে। কিন্তু বড় ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় আছে। শুধু তাই নয়, চারটি ইতোমধ্যে আলাদা পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। অথচ এভাবে পরীক্ষা নিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে অন্তত ৬-৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এতে একজন শিক্ষার্থীর গড়ে ৯০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে ইউজিসির এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

এর আগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। এতেও ভিসিরা একই (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে আলোচনার পর জানানো) জবাব দেন। এসময় শিক্ষামন্ত্রী ভিসিদের প্রস্তাব দিয়েছেন, তারা যদি শিক্ষকদের এর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে না পারেন তাহলে তিনি (মন্ত্রী) সভায় এ ব্যাপারে বক্তৃতা দিতে রাজি আছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমন্ত্রণ গ্রহণে প্রস্তুত।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রীর এ পদক্ষেপ খুবই যুগোপযোগী। করোনাকালে এমনিতেই মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। শীতকালে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা আছে। এরপরও আমরা যদি বিভাগে-বিভাগে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করি তাহলে সেটা হবে খুবই অমানবিক।

ইউজিসির সূত্রে জানা গেছে, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদই কাজ করছে। এ ব্যাপারে তাদের একটি কমিটি আছে। ওই কমিটি প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা ও কৌশল ঠিক করছে। সেটি অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তিনটি গুচ্ছ পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব আছে। এগুলো হচ্ছে- কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে শেষেরটির বিষয়ে গঠিত কমিটির কো-কনভেনর হলেন অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ।

এ বিষয়ে এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের মত করে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আছে। তবে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের কথা বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। করোনা পরিস্থিতিতে যদি আগের মতো পরীক্ষা হয় আর এজন্য সবাই যদি একসঙ্গে অংশ নেয় তবে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে।

তিনি বলেছিরেন, শুধু একটি স্বার্থের দিকে তাকালে হবে না। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের দিকটি দেখতে হবে। সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে ঝুঁকি ও সময় অপচয় কম হবে।

 


সর্বশেষ সংবাদ