১৯ মে ২০২৪, ০৯:৩১

মিথ্যা প্রচারণায় বিব্রত ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রিয়ন্তী

প্রিয়ন্তী ও ঢাবির লোগো  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন প্রিয়ন্তী মন্ডল। ফল প্রকাশের পর থেকে তাকে নিয়ে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার টানাহেঁচড়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রিয়ন্তীকে নিজেদের শিক্ষার্থী দাবি করে অনলাইন-অফলাইন উভয় মাধ্যমেই প্রচারণায় ব্যস্ত এসব কোচিং সেন্টার। এর মধ্যে ইউসিসি অন্যতম।

কোচিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছরই ঢাবি-বুয়েট-মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। অনেক কোচিং সেন্টারই পরীক্ষায় সেরা হওয়া শিক্ষার্থীদের নিজেদের দাবি করে। শেষ মুহূর্তে মডেল টেস্ট দিয়ে থাকলেও তাকে নিজেদের শিক্ষার্থী দাবি করে পোস্টার তৈরি করা হয়। আবার ক্লাস-মডেল টেস্ট কিছু না দিলেও নিজেদের বলে দাবি করা হয়। 

ফোকাসের খুলনা শাখাতে আমি ক্লাস-পরীক্ষা দিয়েছি। ফোকাস ব্যতীত অন্য কোনো কোচিংয়ের সাথে আমি যুক্ত ছিলাম না। আমি জানি না কেন অন্য কোচিং আমার অনুমতি ব্যতীত আমার ছবি ব্যবহার করছে’— প্রিয়ন্তী

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনার সরকারি এম এম সিটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন প্রিয়ন্তী। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির শুরু থেকেই তিনি ফোকাস কোচিংয়ের খুলনা শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিষয়টি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছিলেন প্রিয়ন্তী। এরপরও প্রিয়ন্তীর ছবি ব্যবহার করে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের প্রচারণায় ব্রিবত তিনি।

আরও পড়ুন: সংবর্ধনার নামে প্রতারণা করছে ইউসিসি, অভিযোগ রাবি শিক্ষার্থীদের

বিষয়টি নিয়ে গত ১৫ মে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, ‘এখনও অনেকেই বিভিন্ন কোচিংয়ের পোস্ট দেখে হয়তো বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আমি আসলে কোন কোচিংয়ে ক্লাস করেছি। কিন্তু আমার উত্তর শুরুতে যা ছিলো এখনও সেটাই থাকবে... তা হলো ফোকাসের খুলনা শাখাতে আমি ক্লাস-পরীক্ষা দিয়েছি। ফোকাস ব্যতীত অন্য কোনো কোচিংয়ের সাথে আমি যুক্ত ছিলাম না। আমি জানি না কেন অন্য কোচিং আমার অনুমতি ব্যতীত আমার ছবি ব্যবহার করছে।’

ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকেই প্রিয়ন্তীকে নিজেদের শিক্ষার্থী বলে দাবি করে প্রচারণা চালাচ্ছে ইউসিসি। বিষয়টিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও ইউসিসির দাবি, ইউসিসির খুলনা শাখায় ভর্তি ছিলেন প্রিয়ন্তী। শাখাটিতে তার ফর্ম-ফিলআপ করা রয়েছে। তিনি ওই শাখার একটি স্কলারশিপে পরীক্ষা দিয়েছেন ও পুরষ্কার জিতেছেন। এই বিষয়টিকে পুঁজি করেই প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।

ইউসিসির প্রচারণায় দেখা গেছে, অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে প্রিয়ন্তীকে জড়িয়ে চলছে ইউসিসির প্রচারণা। সেখানে খুলনার সরকারি এমএম সিটি কলেজের ছাত্রী প্রিয়ন্তী মন্ডলসহ আরও রয়েছেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ছাত্রী নাফিসাহ্ তাবাসসুম ও চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্রী অথৈ ধর। এখানের সবাই ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন ইউনিটে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। যাদের সবাইকে নিজেদের শিক্ষার্থী বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রিয়ন্তীর ছবি ব্যবহার করে ইউসিসির প্রচারণা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসিসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউসিসিতে ক্লাস করেনি প্রিয়ন্তী। তবে তিনি এখানে ভর্তি ছিলেন। ইউসিসিতে তিনি ভর্তি থাকায় তার সাফল্যে আমরা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আমাদের নিজেদের সংগ্রহে প্রিয়ন্তী সম্পর্কে যে পরিমাণ তথ্য ছিলো, আমরা শুধুমাত্র সেটুকু প্রচার করেছি।

যদিও ইউসিসির এই দাবির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন প্রিয়ন্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমি শুরু থেকেই ফোকসের খুলনা শাখাতে কোচিং করেছি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে আমি সর্বোত্তম সাহায্য পেয়েছি। ফোকাস ছাড়া আমি অন্য কোনো কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না।’’

এদিকে প্রিয়ন্তী নিজেকে ইউসিসির শিক্ষার্থী বলতে অস্বীকৃতি জানালেও তাকে নিয়ে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে কোচিং সেন্টারটি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অবশ্য প্রতি বছরই এমন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কোচিংগুলোর এমন প্রচারণা নিয়ে চলতে থাকে বিদ্রুপ।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন সাখাওয়াত জাকারিয়া। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগে পড়ালেখা করছেন। প্রিয়ন্তীও কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হওয়ার পর আইন বিভাগকেই বেছে নিয়েছেন। বিভাগের জুনিয়র হিসেবে প্রিয়ন্তীর বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন সাখাওয়াত নিজেই।

সাখাওয়াত জাকারিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, প্রিয়ন্তী মেয়েটা আমাদের আইন বিভাগের নিউ জুনিয়র। এবার ২৩-২৪ সেশনে ‘বি’ ইউনিটে ১ম হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় টপারদের নিয়ে আমাদের দেশে সাধারণত যা হয় ওরেও নিয়েও ঠিক তেমনি টানাটানি শুরু হয়। কিন্তু ও রেজাল্টের দিনই পোস্ট দিয়ে বলে দেয় সে ফোকাস খুলনা শাখায় কোচিং করেছে। অন্য কোথাও করেনি। তবুও অন্য কিছু কোচিং ব্যবসায়ীরা এখনো তার ছবি ব্যবহার করছে। সেটা নিয়েও প্রিয়ন্তী মেয়েটা আপত্তি তুলেছে। আপত্তি তোলারই কথা। কারণ এটা ওর প্রাইভেসি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৮ মার্চ এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবছর কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ২ হাজার ভর্তিচ্ছু। আর উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ২৭৫ জন। পাসের হার ছিল ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।