গুচ্ছের কুবি কেন্দ্রে ল্যাব-সেমিনারে পরীক্ষা, ১ টেবিলে বসলেন ১৮ জন
গুচ্ছভুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে এক টেবিলে বসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৮ জন ভর্তিচ্ছু। শুক্রবার (৩ মে) গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এমন চিত্র দেখা যায়। কুবি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থীর ভর্তি নিতে সেমিনার কক্ষ, প্রশাসনিক ভবন ও মিডিয়া ল্যাব ব্যবহার করা হয়েছে।
এর আগে, উপাচার্যের নির্দেশে বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়াই মিডিয়া ল্যাব ব্যবহার করায় সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন কাজী এম. আনিছুল ইসলাম। শিক্ষকরা বলছেন, উপাচার্য ইচ্ছাকৃতভাবে অনভিজ্ঞ এবং মোস্ট জুনিয়র শিক্ষকদেরকে এই দায়িত্ব দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সব সেমিনার ও লাইব্রেরিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এসব কক্ষের টেবিলগুলোতে ১৮-২০ জন ভর্তিচ্ছু বসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন৷ এছাড়াও প্রশাসনিক ভবনের হল রুমেও এবার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্বের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়ও এভাবে সেমিনার ও লাইব্রেরিগুলোতে আসন বিন্যাস করা হয়েছে।
সেমিনার লাইব্রেরিতে পরীক্ষা দেওয়া এক শিক্ষার্থীর জানান, সেমিনার কক্ষে তাদের কোন সিট প্ল্যান বসানো হয়নি। শিক্ষকরা যাকে যেখানে বসতে বলেছেন তারা সেখানেই বসে পরীক্ষা দিয়েছেন। একসাথে এক টেবিলে এতোজন গাদাগাদি করে পরীক্ষা দেওয়াতে মনোযোগেও সমস্যা হচ্ছিলো। আরও বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আসলেও এভাবে গায়ে লেগে বসে পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা এখানেই প্রথম।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ৫ম তলার হল পরিদর্শক ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, আমি ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক। কিন্তু সিট প্ল্যানের জন্য ‘কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটি’ নামে আলাদা একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিই আসন বিন্যাসের ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে।
আরও পড়ুন: আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ফল
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. প্রদীপ দেবনাথ বলেন, আমার অনুষদের প্রতিটি বিভাগের সেমিনার ও লাইব্রেরিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এভাবে এক টেবিলে ১৮-২০ জন পরীক্ষা দিলে সেটার স্বচ্ছতা কতটুকু থাকবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটিই বলতে পারবেন।
শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, পূর্বে যতগুলো ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলো আমরা খুব ইমেজের সাথে শেষ করেছি। কিন্তু এই উপাচার্য এবার আসন বণ্টনের যে কমিটি করেছেন সেখানে তিনি তার আস্থাভাজন একেবারে অনভিজ্ঞ-জুনিয়র শিক্ষকদেরকে দিয়ে করিয়েছেন। যার ফলে এরা ল্যাব, সেমিনারের মতো রুমগুলোতেও পরীক্ষা নিয়েছে।
অধ্যাপক কাজী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, যেখানে ৫ জন বসতে পারবে সেখানে ১০ জন বসিয়েছে। এটা আসলে এদের অনভিজ্ঞতার ফল। আর এই দায়ভার সম্পূর্ণ উপাচার্যের। তিনি ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছেন। দেশবাসীর কাছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে হাস্যকর করে তুলছেন।
কেন্দ্র ব্যবস্থা কমিটির সদস্য সচিব আবু উবায়দা রাহিদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমন অদ্ভুত আসন বিন্যাসের দায়ভার তিনি নেবেন কিনা, সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজে কোনো দায় না নিয়ে কমিটির আহ্বায়কের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তবে এর আগে উপাচার্যের নির্দেশে আবু ওবায়দা রাহিদ এমন সিটপ্ল্যান করেন বলে জানা গেছে। নির্দেশনার পর বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া মিডিয়া ল্যাব কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হলে বিষয়টি নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ওই বিভাগীয় প্রধান কাজী এম. আনিছুল ইসলাম সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, এবার আমরা চেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে। সেজন্যই সেমিনার লাইব্রেরিগুলোতেও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই অল্প সংখ্যক পরীক্ষার্থীর জন্য আরেকটা কেন্দ্র ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল।
এক টেবিলে ১৮-২০ জন একসাথে পরীক্ষা দিলে সেখানে স্বচ্ছতা থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের শিক্ষকরা দায়িত্বে ছিলেন। তারা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছেন। এখন যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে পরবর্তীতে এভাবে সেমিনার ও লাইব্রেরিগুলোতে আমরা আর পরীক্ষা নেবো না।
প্রসঙ্গত, গুচ্ছভুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে এবার ৪ হাজার ২৯২ জন পরীক্ষার্থীর আসনের ব্যবস্থা করা হয়। এরমধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার এই দুইটি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার (৩ মে) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।