১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:২৬

কৃষিগুচ্ছে ফেল হওয়া বড় অংশের হিসাব মিলছে না

ভর্তি পরীক্ষা   © টিডিসি ফটো

আটটি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলের হিসাব মেলাতে পারছেন না ভর্তিচ্ছুদের বড় একটি অংশ। তারা বলছেন, পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন জায়গায় সলভ করা প্রশ্নোত্তরের সঙ্গে এসে মিলিয়ে দেখেছেন। এতে তারা যে নম্বর পাওয়ার প্রত্যাশা করেছেন—তারা তার ধারেকাছেও নেই। আবার অনেকে পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মেধাতালিকায় রয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।

কারিনা না নামে এক ভর্তিচ্ছু বলেন, আমি এবার কৃষিগুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। আমার পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। পরীক্ষা শেষে উত্তর মিলিয়ে দেখেছি এতে আমার ৬৫+ নম্বর আসে। এছাড়া আমার জিপিএ নম্বরে ৪৫ থাকে। প্রত্যাশা করেছি মেধাতালিকায় থাকবো। কিন্তু আমি নেই।

এ ভর্তিচ্ছু জানান, বিষয়টি শুধু আমার সঙ্গে নয়, অনেকের সঙ্গেই এমনটা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সময়ে শিক্ষার্থীরা এমনিতেই মানসিক চাপে থাকেন। কৃষিগুচ্ছের এমন ফল শিক্ষার্থীদের আরও হতাশ করেছে।

আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পরীক্ষার প্রশ্নে ‘বি’ সেটে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। পরীক্ষা শেষেই ফেসবুকে প্রদত্ত বিভিন্ন গ্রুপের প্রশ্নোত্তরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন তিনি। এতে ৬৯ নম্বর পেয়েছেন তিনি। এছাড়া তার জিপিএ হিসেবে নম্বর আসে ৪৩। সব মিলিয়ে ১১২ নম্বর। এতে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। বিষয়টি জানার পর পরিবারও খুশি। তবে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরেই বাঁধে মূল বিপত্তি!

তিনি জানান, আমার এক বন্ধু পরীক্ষায় ৭০টি প্রশ্নোত্তর করে ৮৯৮তম অবস্থানে রয়েছে। আমার এবং তার জিপিএ নম্বর সমান। আমার ক্ষেত্রে কেন এমনটা হয়েছে? 

এ ভর্তিচ্ছু আরও জানান, আমাদের কয়েকজন শেকৃবিতে গিয়ে কথা বলেছে। তবে শেকৃবি কর্তৃপক্ষ আমাদের সল্যুশন শিট দেখাচ্ছেন না। বলছেন এটা নিয়মে নেই। গত বছরও এমন ভুল হয়েছে। পরে রি-চেক করে ফল প্রকাশের পর তা পরিবর্তন হয়েছে।

এদিকে এ ভর্তিচ্ছু জানান, আমরা যারা ‘সি’ সেটে পরীক্ষা দিয়েছি। তাদের অধিকাংশের এ অভিযোগ। শুধুমাত্র ‘সি’ সেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই প্রমাণ করছে রেজাল্টে ভুল রয়েছে।

ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ, অনেক পরীক্ষার্থী নাকি কেন্দ্র পরিবর্তনের আবেদন করেছেন তাই তাদের অন্য কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন তো সম্ভব নয়। সম্ভব হলে শেকৃবি কর্তৃপক্ষ অফিশিয়ালি জানালো না কেন। আবার অন্য কেন্দ্রে যাদের পরীক্ষা তাদের সিট আরেক কেন্দ্রে কীভাবে থাকতে পারে। এটাই তো প্রমাণ করে যে সম্পূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতিই দুর্নীতিগ্রস্ত। আবার কেন্দ্র পরিবর্তন করে পরীক্ষা দেওয়া সবাই-ই কী এতোই মেধাবী যে তাদের সবারই মেধাতালিকা এবং ওয়েটিং লিস্টে নাম আসলো? এর সদুত্তর শেকৃবি কর্তৃপক্ষের কাছে নেই কেন?

আরও পড়ুন : কৃষি গুচ্ছের ফল চ্যালেঞ্জ যেভাবে

এদিকে ভর্তি পরীক্ষার কর্তৃপক্ষ বলছেন, কোনো শিক্ষার্থীর যদি প্রকাশিত ফল নিয়ে অভিযোগ থাকে, তাহলে তিনি লিখিত দিতে পারেন। আমরা তাদের অভিযোগ মূল্যায়ন করবো। গত বছরেও এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

মোছা. তাজমিম রহমান নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, ‘কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে ৭০ মার্কস আসে। জিপিএসহ ১১০ এর বেশি নম্বর আসে। কিন্তু আমার রোল কোথাও আসেনি। ওয়েবসাইটে লিখা রয়েছে, আপনি ভর্তির জন্য বিবেচিত হননি। আমার রোল ১০০৮০।’

রাহাত হাসান জানান, ‘কৃষিগুচ্ছ পরীক্ষা দেওয়ার পর অ্যাসপেক্ট ও উদ্ভাস-এর সমাধানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলাম আমার নম্বর ৬৮ এর বেশি হয়েছে এবং ভুলের জন্য কাটার পরে মোট নাম্বার ৬৩ এর মতো আসছে। সেখানে আমার ওয়েটিং লিস্টেও নাম নেই।’ 

এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য ও কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-২২ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া জানান, এ ধরনের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। প্রতিবছর এমন একটি শ্রেণি থাকেন। ফল নিয়ে কারোর কোন অভিযোগ থাকলে, তারা আমাদের লিখিত দিতে পারেন।

ফল পুনঃমূল্যায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানান, সভা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করবো। ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সেটি অনুসরণ করবো।

‘পরীক্ষায় অনুপস্থিত এরপরও মেধাতালিকায় রয়েছে অনেক ভর্তিচ্ছু’ প্রশ্নের ব্যাখ্যায় শেকৃবি উপাচার্য জানান, অনেক ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার আগে আবেদন করেছেন, তিনি যে কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, সে কেন্দ্রে অংশ নিতে চাচ্ছেন না। তাকে তার পরবর্তী আবেদনের ভিত্তিতে নতুন কেন্দ্র দেয়া হয়েছে। এতে করে মনে হয়েছে তিনি অনুপস্থিত। তিনি অন্য কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এ নিয়ে ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ সঠিক নয়।