শঙ্কায় এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা
এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের প্রকোপ ফের বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে, বিকল্প পদ্ধতিতে পাবলিক এ পরীক্ষা দুটি নেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকায় ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে অনেক শিক্ষার্থী।

তথ্যমতে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এই সময়ে সকল প্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে এই বন্ধের কারণে পাবলিক এ দুই পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ল।

সাধারণত ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও এবার করোনার কারণে তা শুরু করা যায়নি। কবে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে কিংবা বিকল্প কোন পদ্ধতিতে মূল্যয়ন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা নেই সরকারের।

এদিকে, আজ বুধবার (৩০ জুন) সংসদে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ার সময় এক বক্তব্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এ বছরের সিদ্ধান্ত আমরা খুব শিগগিরই জানাবো। কী পদ্ধতি আমরা করবো সবকিছুই আমরা জানাবো। তবে, শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সবাইকে বলবো উদ্বিগ্ন হবেন না। বৈশ্বিক সংকট চলছে। এই সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকল ক্ষেত্রে সেভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হবে। এটি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। অবশ্যই আমরা প্রজ্ঞা, জ্ঞানের সব কিছু প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেবো।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বহু দেশ এমন কী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করেছে। কোনও কোনও প্রেডিকটেড গ্রেড দিচ্ছে। আমরা সেখানে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ফেলেছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিক দুই/তিনদিন আগে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে আমরা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তার ফলাফল দিয়েছিলাম। আমরা যেভাবে বিচার বিশ্লেষণ ও টালি করে ফলাফল দিয়েছি দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ফলাফল এরকমই হতো। কাজেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। 

২০২০ সালের মার্চে দেশে যখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিল, তার আগেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষারা আটকে যান। করোনার প্রকোপ না কমায় পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের অটো পাস দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

২০২১ সালে এসেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারায় যথাসময়ে নেওয়া হয়নি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। এই মহামারীতে শিক্ষাপঞ্জি ভেস্তে যাওয়ায় সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসানোর কথা বলছিল সরকার।

গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখনই খোলা হোক না কেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করিয়েই এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নিবো। এক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ দিন ক্লাস করানো হবে।

কিন্তু সেই ক্লাস শুরুর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির দিকে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়াশোনায় মনোযোগ ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তাদের প্রশ্ন রয়েছে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি নিয়েও।

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ভাবতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে। কেউ কেউ দ্রুত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরুর পক্ষে, আবার অনেকের মধ্যে সে বিষয়ে দ্বিধা আছে।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল নাহিদ গণি তালুকদার তাপসি নামের এক শিক্ষার্থীর। তিনি বলেন, এইচএসসিতে যদি অটো পাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে আমি মনে করি, পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলোতে যারা ভালো রেজাল্ট করেছিল তাদের জন্য ভালো কারণ তাদের রেজাল্ট অটোপাশের ভিত্তিতে ভালো হবে। আর যাদের রেজাল্ট আগে ভালো হয়নি তারা সমস্যায় পড়বে।

রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা অসিত জাওয়াদ ইসমামের। তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ সালের এপ্রিলেই হয়ে যেত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার পরীক্ষা নিচ্ছে না। দীর্ঘ সময় স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকায় পড়ালেখা থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে সবাই। এখন আমরা যারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছি, আমাদের একটা সঠিক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত জানানো উচিত। সেটা অটোপাশ হোক আর যাইহোক।

অসিত আরও বলে, অনলাইন ক্লাসকে আমরা শুরতে যতটা ইফেক্টিভ ভেবেছিলাম ততটাও ইফেক্টিভ না। তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে তা পৌঁছাতে পারছে না। তাই এখন আসলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে যে তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে নাকি এডমিশনের। তাই দ্রুত আমাদের সিদ্ধান্ত জানানো উচিত, ইতোমধ্যে অনেক বড় একটি সময় পার হয়ে গেছে।

সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. কামরুজ্জামান বলেন, অনেক দিন কলেজ বন্ধ থাকায় পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্তকে আমার ভালোই মনে হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে এই অনিশ্চয়তার কারণে আসলে পড়াশোনার রিদম হারিয়ে যাচ্ছে। আমার পরিবারের হয়তো এই লম্বা একটা সময় যাবৎ আমাকে পড়াশোনা করানোর ধৈর্য্য আছে কিন্তু আমার অনেকের পরিবারেরই তা নেই। যেমন আমার অনেক মেয়ে ফ্রেন্ডেরই বিয়ে হয়ে গেছে। পরীক্ষা নিয়ে এই অনিশ্চয়তার কারণে অনেকের শিক্ষা জীবনটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কারো মেধার সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয় বলে মনে করে সে।

অটো পাশ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আগের যে ব্যাচকে অটো পাশ দেওয়া হয়েছে তাদের মেডিকেল, বুয়েটে আবেদন করার সময় অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। তাছাড়া অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট আছে যাদের এসএসসিতে হয়তো রেজাল্ট একটু খারাপ হয়েছে, অটো পাশের ভিত্তিতে রেজাল্ট দিলে তাদের এইচএসসির রেজাল্ট খারাপ হবে। তাই আমি অটো পাশকে কখনোই ভালোভাবে দেখি না।

প্রসঙ্গত, মহামারীর কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফা খোলার পরিকল্পনা নিয়েও মহামারী পরিস্থিতির কারণে বার বার হোঁচট খেতে হয়েছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলমান লকডাউনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো হয়েছে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত।


সর্বশেষ সংবাদ