কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতায় চরম ভোগান্তিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা
- মোঃ রাকিবুল হাসান তামিম
- প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২০, ০৩:২৮ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২০, ০৯:৫৬ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী শিলা আক্তার। স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় সকল বিষয়ে অংশগ্রহণ করেও ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেলো তার ফলাফল অসম্পূর্ণ। কারণ অনুসন্ধান করে তিনি দেখতে পান তার রেজাল্ট শিটে উল্লেখ রয়েছে- তিনি এক বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। অথচ তিনি দিব্যি শেষ বর্ষের সকল পরীক্ষা মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্র থেকে অংশগ্রহণ করেছেন। অর্থ্যাৎ এই শিক্ষার্থী সব বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েও অনুপস্থিত!
ভোগান্তির শুরু এখানেই। এরপর চলমান এই করোনাকালীন সংকটময় মুহূর্তেই সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে হাজিরা খাতা সংগ্রহ করে এর ফটোকপি নিয়ে নিজ কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষর সমেত হাজির হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে। অফিস থেকে বলা হয়, দুইমাস পর যোগাযোগ করুন।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী শিলা বললেন, শুধু কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা আর সমন্বয়হীনতার করণেই আমার ফলাফল অসম্পূর্ণ আসে। এমন ঘটনার দায় আমরা কেন নেব? আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। শুধু তাদের ভুলের কারণে স্নাতক সম্পন্ন করেও আমি সরকারি কোন চাকরিতে আবেদন করতে পারছি না। এখন আমাকে বলা হচ্ছে দুইমাস সময় অপেক্ষা করার জন্য। এখানে আমার কি দোষ? এই সমস্যার শেষ কোথায়?
সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী সুমনের সমস্যাও একই। সব বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও অনুপস্থিত। তাকেও হাজিরা খাতার ফটোকপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করতে হয়েছে। অপেক্ষা করতে হবে দুই মাস। সুমনের প্রশ্নও একটাই! পরীক্ষা দিয়েও কেন অনুপস্থিত।
কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা আর দায়িত্বশীলতার অভাবে এরকম নানামুখী অসংখ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে শতশত শিক্ষার্থীকে।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী গোলাম মোর্শেদ। তিনি ২০১৮ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে দ্বিতীয় বর্ষের দুইটি মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নেন়। এরপর ২০১৯ সালে প্রকাশিত ফলাফলে একটি বিষয়ে পাস আসলেও আরেকটি বিষয়ের ফলাফলের ঘরটি ফাঁকা। কারণ জানতে ওই শিক্ষার্থী ২০১৯ সালের ২৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করেন।
এরপর কয়েক দফা যোগাযোগ করলেও মেলেনি সেই বিষয়ের ফল। এমনকি ওই বিষয়ে তিনি পাস করেছেন নাকি ফেল করেছে তাও জানেন না এই শিক্ষার্থী। স্নাতক শেষে সহপাঠিরা ইতোমধ্যে চাকরিতে যোগদান করলেও নিজের কোনো গতি করতে পারেননি তিনি।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন। প্রথম থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত সব বিষয়ে পাস থাকা সত্ত্বেও সিজিপিএ আসেনি এই শিক্ষার্থীর। সিজিপিএ প্রকাশের জন্য করতে হবে ফলাফল সমন্বয়ের আবেদন। এতে আবার সব বর্ষের ফলাফলের কপি, পরীক্ষার প্রবেশপত্র সহ আবেদন পত্রে নিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর, কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষরসহ আবেদনপত্রটি জমা দিতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বরাবর।
কিন্তু ফলাফল সমন্বয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হওয়ার কথা। নিজের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থী বলেন, আমার সব বিষয়ে পাশ থাকা সত্ত্বেও আমার ফলাফল অসম্পূর্ণ এসেছে। এই দায় কে নেবে? প্রশাসনিক অসহযোগিতায় আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আবার সব বিষয়ে পাশ করলেও কবি নজরুল কলেজ শিক্ষার্থী আবু তালেবের ফলাফল অসম্পূর্ণ। এই শিক্ষার্থী গত ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ ফলাফলের জন্য আবেদন করেও এখনো ফল পাননি।
আল আমিন নামের আরেক শিক্ষার্থী গত ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রের হাজিরা খাতার ফটোকপি সহ আবেদন করলেও দীর্ঘদিনেও ফল সংশোধন হয়নি তার।
সরকারী তিতুমীর কলেজের আরেক শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, আমি মোট সাতটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিলেও ফলাফলে ছয়টি বিষয় এসেছে৷ এখন নাকি পরীক্ষার কেন্দ্র কবি নজরুল কলেজ থেকে হাজিরা খাতার কপি এনে আবেদন করতে হবে৷ কিভাবে আবেদন করতে হবে কিছুই বুঝতেছি না। এমন দুঃসময়ে এই হেরফের মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হবার পরই এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রকাশিত ফলাফলে অসংখ্য শিক্ষার্থীর সিজিপিএ আসেনি। যার ফলে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে শত শত শিক্ষার্থী।
ফলাফল অসম্পূর্ণ এসব শিক্ষার্থীদের করতে হবে ফলাফল সমন্বয়ের আবেদন। করোনা ভাইরাসের এই সময়ে শিক্ষার্থীরা যার যার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ঢাকায় এসে সব বর্ষের ফলাফলের অনলাইন কপি অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে নিজ কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষরসহ আবেদন করা শিক্ষার্থীদের বেশ বিড়ম্বনায় ফেলেছেন।
এছাড়া পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পরও অনুপস্থিত দেখানোর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা হিসেবেই দেখছেন শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া কেন্দ্র থেকে হাজিরা খাতার কপি শিক্ষার্থীদের নিজেদেরই সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এরপর আবার সেই কপি আবেদনপত্রের সাথে যুক্ত করতে হচ্ছে এতে আরো বাড়তি ভোগান্তি এবং বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীদের।
তবে এসব সমস্যা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই মনে করছেন সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্ল্যাহ খোন্দকার। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনেক সময় কেন্দ্রের অসাবধানতার কারণে পরীক্ষা দেবার পরও অনুপস্থিত আসতে পারে। কিন্তু এমন সমস্যা অভিযোগ পাবার সাথে সাথেই সমাধানের চেষ্টা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেন সাথে সমন্বয় করে করোনাকালীন সময়েও গতিশীলতা বজায় রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ বাহালুল হক চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এসব বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলতে আনাগ্রহী বলে জানান।