এইচএসসির ফলাফলে অসঙ্গতি-ত্রুটি, যা বলছে শিক্ষা বোর্ড
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন এ পরীক্ষায় বসা শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাদের বেশিরভাগ অটোপাস বা অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর ফল সাবজেক্ট ম্যাপিং করে প্রকাশের দাবি জানালেও কিছু শিক্ষার্থী ফল নিয়ে অসঙ্গতি ও ত্রুটির অভিযোগ তুলেছেন। মূলত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দাখিল উত্তীর্ণ হয়ে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ফলের অসঙ্গতি ও ত্রুটি নিয়ে বেশি অভিযোগ তুলেছেন। তবে, এসএসসি উত্তীর্ণ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় বসা শিক্ষার্থীদেরও এ অভিযোগ আছে।
যদিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফলের অসঙ্গতির অভিযোগ জানানো শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। তবে, তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে শিক্ষা প্রশাসন। শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে অভিযোগ বোর্ডে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছর কয়েকটি বিষয়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে পরীক্ষা স্থাগিত হয়ে যায়। সরকারের পটপরিবর্তনের পর পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে তা সম্ভব হয়নি। বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা প্রশাসন। ওই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এইচএসসিতে মূল্যায়ন করা হয় পরীক্ষার্থীদের।
আরও পড়ুন : জানা গেল এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল প্রকাশের দিনক্ষণ
ফলাফলে অসঙ্গতির অভিযোগ জানানো কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গাজীপুরের হারবাইদ দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার। তিনি চলতি বছর গাজীপুরের সরকারি কালিগঞ্জ শ্রমিক কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ফাতেমা আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, তিনি দাখিলে আকাইদ ও ফিকহতে এ প্লাস; কোরআন মাজিদ ও আইসিটিতে এ; ইংরেজি ও ইসলামের ইতিহাসে এ মাইনাস; আরবিতে বি এবং গণিতে সি পেয়েছিলেন। তবে এইচএসসিতে সামাজিক কর্ম, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইসলামের সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিষয়ে তার সি গ্রেড এসেছে। তার দাবি, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ওই তিনটি বিষয়ে তার আরও ভালো গ্রেড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বঞ্চিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন : আগামী বছর এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা কবে?
একইভাবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন লোহাইর দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ফরিদপুরের সরকারি ইয়াসিন কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন মো. রনি মোল্লা। চলতি বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছেন তিনি। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, দাখিলে কোরআন মাজিদ ও হাদিস শরীফ, আরবি, আকাইদ ফিকহ, বাংলা, আইসিটি, ক্যারিয়ার শিক্ষা, কৃষি, শারিরীক শিক্ষায় এ প্লাস; ইসলামের ইতিহাস, ইংরেজিতে এ এবং গণিতে এ মাইনাস পেয়েছিলেন। তবে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ফলে তার পৌরনীতি ও সুশাসনে এ মাইনাস এসেছে। তিনি এটিকে বৈষম্য বলছেন। তারা দাবি এ বিষয়গুলোতে তিনি আরও ভালো গ্রেড প্রাপ্য ছিলেন।
ঢাকা বোর্ডের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এসএসসিতে তার কৃষি বিষয় ছিল, যাতে এ প্লাস পেয়েছিলন। কিন্তু এইচএসসিতে তা ছিল না। এইচএসসিতে ছিল উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন। কিন্তু এ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন বিষয়ে তিনি পেয়েছেন বি। তিনি দাবি করেন, কৃষি বিষয় বিবেচনায় তার উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন বিষয়ের সাবজেক্ট ম্যাপিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। তাই বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের দারস্থ হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাসার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এইচএসসির ফলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে আসা কিছু শিক্ষার্থীর বিষয় আমাদের নজরেও এসেছে। দাখিল পরীক্ষার্থীদের যে বিষয়গুলো সেগুলোর সঙ্গে এইচএসসির বিষয়ের মিল নেই। তাই সবার সমন্বয়ে গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক কমিটি সিদ্ধান্ত দেয় তাদের দাখিলের গণিত বিষয়ের ফল নিয়ে এইচএসসিতে শিক্ষার্থীদের সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হয়। পরামর্শক কমিটির মতে এটিই যৌক্তিক। কারণ অন্যান্য বিষয় থেকে নিলে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। সে হিসেবে দাখিল উত্তীর্ণদের গণিতে গ্রেড সফটওয়্যারে ইনপুট করে ফল প্রস্তুত করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, সফটওয়্যারে ফল প্রক্রিয়াকরণ না করে ম্যানুয়ালি ফল প্রক্রিয়া করলে হয়তো এ ধরনের অসঙ্গতি কম হতো। কিন্তু সে উপায় আমাদের ছিল না। কারণ তাকে ফল প্রস্তুত করতে ছয় মাস সময় লাগতো। সে সময় আমাদের কাছে ছিল না।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনেকগুলো বিষয়ে পরীক্ষা না নিয়ে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর ফল দেয়া চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে একজন শিক্ষার্থীও যেন শিক্ষা বোর্ডের অসঙ্গতির কারণে ভুক্তভোগী না হন সেটাই আমরা চাই। কোন শিক্ষার্থী যদি তার ফল নিয়ে সন্তুষ্ট না হন তবে আমাদের অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেব। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে তারা যদি আমাদের বিষয়গুলো জানান সে ক্ষেত্রে আমরা তার অভিযোগ যাচাই করে দেখবো। তার ফল পরিবর্তন করার সুযোগ শিক্ষা বোর্ডের আছে। তাই শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে অভিযোগ বোর্ডকে জানানোর পরামর্শ দেব।