নতুন শিক্ষাক্রমে জিপিএ বাদ, শুধু প্রকাশ হবে ‘৭ পর্যায়’ বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন

  © ফাইল ছবি

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) বা অন্য কোনো গ্রেডিং থাকছে না। শুধু বিষয়ভিত্তিক পারফরম্যান্স ইনডিকেটর দেওয়া হবে। আর প্রত্যেক বিষয় মূল্যায়নে সাতটি পর্যায় বা স্কেল দেওয়া হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কোন নম্বর থাকবে না। পরিবর্তে, শিক্ষার্থীদের 'অনন্য', 'অর্জনমুখী', 'অগ্রগামী', 'সক্রিয়', 'অনুসন্ধানী', 'বিকাশমান' এবং 'প্রারম্ভিক' এই সাতটি স্তরের মধ্যে একটিতে মূল্যায়ন করা হবে। সবচেয়ে ভালো করলে 'অনন্য' স্তর পাওয়া যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি এই মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে। ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটির আগামী বৈঠকে এটি অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, "নতুন শিক্ষাক্রমে জিপিএ বা অন্য কোন গ্রেডিং ব্যবস্থা থাকবে না। মূল্যায়নে বিষয়ভিত্তিক পারফরম্যান্স অর্জনে জোর দেওয়া হবে।"

মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য নৈপুণ্য অ্যাপ প্রস্তুত করা হবে।

মূল্যায়ন রূপরেখায় প্রতিবছরের এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ডিসেম্বরে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোনো কারিকুলামে দশম শ্রেণি শেষে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হতো। কিন্তু নতুন কারিকুলামে যেহেতু আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই আর বেশির ভাগই শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের দক্ষতা যাচাই করা হবে, তাই দশম শ্রেণি শেষে ডিসেম্বরেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

আগামী বছর (২০২৫ সাল) ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে শেষ হচ্ছে পুরোনো শিক্ষাক্রম। তাই আগামী বছরের ডিসেম্বরেই দশম শ্রেণি শেষে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন করা যায় কি না সে ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় সামষ্টিক মূল্যায়ন বা লিখিত অংশে ৬৫ নম্বর এবং শিখনকালীন মূল্যায়ন বা শ্রেণি কার্যক্রমে ৩৫ নম্বর রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শ্রেণি কার্যক্রম বলতে বোঝানো হয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান, পরিকল্পনা প্রণয়নের মতো কাজ।

সূত্র জানায়, আগে এসএসসি বা এইচএসসিতে তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে পাঁচ ঘণ্টায়। দীর্ঘ এ সময়টা পরীক্ষার হলেই অবস্থান করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। অবশ্য মাঝে বিরতি পাবে তারা। পাবলিক পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। বিষয়গুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি।

বিষয়ের চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রকল্পভিত্তিক কাজ, সমস্যা সমাধান, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে পরীক্ষার্থীদের। মূল্যায়নে অনুসন্ধান, প্রদর্শন, মডেল তৈরি, উপস্থাপন, পরীক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় থাকবে। পরীক্ষার মান ও মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা যাতে বজায় রাখা যায়, সে জন্য লিখিত মূল্যায়নে বর্তমান পাবলিক পরীক্ষার মতো খাতা ব্যবহার করা হবে।

 

সর্বশেষ সংবাদ