ভাই ও নিজের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় জামিন পেয়ে যা বললেন মেহজাবীন
সম্প্রতি আলোচিত মডেল-অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত। গত রবিবার (১৬ নভেম্বর) তাদের আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল। এ প্রেক্ষিতে আদালতে আত্মসমর্পন করে তিনি জামিনও নিয়েছেন। জামিন নেওয়ার পর মামলার বিষয়ে তিনি তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রদান করেছেন।
গতকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ ভ্যারিফায়েড অ্যাকাউন্টে ‘আমার অফিশিয়াল বিবৃতি’ নামে একটি পোস্টে নিজের কথাগুলো তুলে ধরেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘একজন অজানা ব্যক্তি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে আমার ও আমার ১৯ বছর বয়সী ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। গত ৯ মাসে আমি এই মামলার কোনো তথ্য পাইনি। কারণ, অভিযোগকারী ব্যক্তি পুলিশকে আমার সঠিক ফোন নম্বর, সঠিক ঠিকানা বা কোনো যাচাইকৃত তথ্য দিতে পারেননি।’
মামলার বাদীর প্রসঙ্গে মেহজাবীন লেখেন, ‘অভিযোগকারীর দাবি, ২০১৬ সাল থেকে তিনি আমার সঙ্গে ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু এ ঘটনার কোনো প্রমাণ দিতে পারেন নাই তিনি। ২০১৬ সাল থেকে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিতেন, সেটাও তিনি দেখাতে পারেননি। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরেও কোনো কিছু আসেনি। একটি স্ক্রিনশটও তিনি দেখাতে পারেননি।’
তাকে বাদীর টাকা দেওয়া প্রসঙ্গে মেহজাবীন বলেন, ‘আমাকে ২৭ লাখ টাকা দিয়েছেন, কীভাবে দিলেন? ব্যাংক লেনদেন, কোনো চেক, বিকাশ লেনদেন, কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রসিদ, কোনো সাক্ষী, কিছুই না। একটি কাগজপত্রও তিনি দেখাতে পারেননি।’
তিনি লেখে, বাদী দাবি করেছেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি এই অভিনেত্রী তাঁকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিল এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট ভাইসহ আরও চার থেকে পাঁচজন। এ প্রসঙ্গে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘এ ঘটনার প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। রেস্টুরেন্ট বা আশপাশের রাস্তার এক সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো সাক্ষী, কোনো প্রমাণ, কিছুই না। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি–নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তবু তিনি একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেননি।’
বাদীর আইনী নোটিশ পাঠানোর দাবি প্রসঙ্গে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘গত ৯ মাসে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোনকল, কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট কিছুই পাইনি। কোনো নোটিশ পেলে আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম। এই মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও যখন জানতে পারলাম, অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছি, কারণ, আমি আইন ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
আরও পড়ুন: ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা
সবশেষে মেহজাবীন লেখেন, ‘সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনকার দিনে কাউকে অপমান, মানহানি বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যেই উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেন, তিনি যা-ই করতে চান—আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
জানা গেছে, পারিবারিক ব্যবসার পার্টনার হিসেবে রাখার বিনিময়ে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ, হুমকি-ধামকি এবং ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে মেহজাবীন ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন আমিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি, যাকে মেহজাবীন অপরিচিত বলে দাবি করছেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, বাদীর সঙ্গে দীর্ঘদিন পরিচয়ের সুবাদে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আসামি মেহজাবীন চৌধুরীর নতুন পারিবারিক ব্যবসার পার্টনার হিসেবে রাখবে বলে নগদ অর্থে এবং বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে মোট সাতাশ লাখ টাকা দেন। এরপর মেহজাবীন ও তার ভাই দীর্ঘদিন ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ না নেওয়ায় বাদী বিভিন্ন সময় টাকা চাইতে গেলে নানা কারণ দেখিয়ে দীর্ঘদিন কালক্ষেপন করেন।
পরবর্তী সময়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পাওনা টাকা চাইতে গেলে তারা ১৬ মার্চ হাতিরঝিল রোডের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে আসতে বলেন। ওইদিন ঘটনাস্থলে গেলে মেহজাবীন ও তার ভাইসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তারা বলেন, ‘এরপর তুই আমাদের বাসায় টাকা চাইতে যাবি না’ তোকে বাসার সামনে পুনরায় দেখলে জানে মেরে ফেলব। এসব কথা বলে তারা বাদীকে জীবননাশের হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভাটারা থানায় গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করার জন্য পরামর্শ দেয়।
এ ঘটনায় আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭/ ১১৭(৩) ধারায় মামলা দায়ের করেন।