শখ থেকেই উদ্যোক্তা ঢাবি ছাত্রী ঐশী

  © টিডিসি ফটো

পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বসে চেষ্টা ও আন্তরিকতা নিয়ে লেগে থাকলে সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়— বিষয়টি বুঝতে পারছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তাইতো, বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীর মনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। এমন একজন একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সৈয়দা আফসারা তাসনিম ঐশী।

উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ কিভাবে তৈরি হলো— এই প্রশ্নের জবাবে ঐশী জানান, “ছোটবেলা থেকেই মেহেদির প্রতি ছিল অন্যরকম এক ভালোবাসা। চাঁদ রাতে আম্মু মেহেদি কিনে দেওয়ার পরই শুরু হয়ে যেতো আমার ঈদ। নিজেরটা নিজেই দিতাম, সেইসঙ্গে ছোট বোনদেরও দিয়ে দিতাম।”

“বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে থাকাকালীন ঈদের পর হাতের মেহেদি দেখে ক্লাসমেটরা পছন্দ করে দিতে চাইলে অনেককেই দিয়ে দিলাম ফ্রিতেই। এরপর সবার উৎসাহে কিছু না ভেবেই ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটা পেজ (ফেসবুক) খুলে ফেলি! একমাস পরই আমার বুকিং আসতে শুরু করে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারিতো ব্রাইডাল সিজন; তখন প্রচুর বিজি শিডিউল থাকে। বিভিন্ন ইভেন্টে কাজ করার জন্য ছোট্ট একটা টিমও আছে আমার।”

জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে Mehedi_Art by Oishi নামক ফেসবুক পেজ থেকে ঐশী শুরু করেন ই-কমার্স প্লাটফর্ম। তিনি জানান, শুরুটা সহজ ছিলনা! সবার উৎসাহে পেজ খুলেছিলাম ঠিকই, কিন্তু পরে বুঝতে পারি যে সমাজে সবকিছু এতটা সুন্দরভাবে নেওয়া হয়না! পরিবার থেকেই বাঁধাটা সবচেয়ে বেশি ছিলো, এখনো আছে। বাবা বেঁচে থাকতে মেয়ে ইনকাম করবে এটা নিয়ে মানুষ কথা বলবে এই ভয়টাই পরিবার পেত বেশি! শখের মূল্যটা আম্মু আর ছোট বোনেরা ছাড়া কেউ দেননি! শুরু থেকেই আমার এই জার্নিতে আমাকে পথ চলতে সাহায্য করেছে আম্মু। এখনো সবচাইতে বেশি সাপোর্ট পাই আম্মুর থেকে।

বাজারের প্রচলিত পণ্য ব্যবহার করছেন কিনা— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রথমে বাজারের মেহেদিগুলো ব্যবহার করতাম। কিন্তু ওসব পণ্যে কেমিক্যালস থাকায় খুব বেশি সন্তুষ্ট ছিলাম না। একসময় মেহেদি নিয়ে খুব রিসার্চ শুরু করলাম, ভাবতে লাগলাম নিজের জন্যে কেমিক্যাল ফ্রি মেহেদি নিজেই কিভাবে বানানো যায়! অনেক রিসার্চের পর একজন হেনা আর্টিস্টের পাশাপাশি আমি এখন একজন কেমিক্যাল ফ্রি অর্গানিক হেনা সাপ্লাইয়ার।

তিনি আরও বলেন, দেশ পেরিয়ে সুদূর নিউইয়র্কেও পাড়ি জমিয়েছে আমার মেহেদী। সাশ্রয়ী মূল্যে চুলের জন্য হারবাল হেয়ার হেনাও আমি নিশ্চিত করেছি আমার পেজে।

খালাতো বোন একবার ঈদে এক বক্স মেহেদি কিনে দেয়, ওটা দিয়েই হেনা আর্টিস্ট হিসেবে জার্নি শুরু করেন ঐশী। আর অর্গানিক মেহেদির কাঁচামাল কেনার প্রথম পুঁজি দিয়েছিল তার কাছের বান্ধবীর থেকে ধার নেওয়া ৩ হাজার টাকা।

বর্তমানে প্রতিমাসে কত টাকার পণ্য বিক্রি হয়— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সাধারণত ব্রাইডাল সিজনগুলোতে বিয়ের বুকিং থাকলে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজারের মতো ইনকাম হয় মোটামুটি। এছাড়া শুধু অর্গানিক মেহেদি কোন দিয়েই প্রতি মাসে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা সেল হচ্ছে। ঈদের সময় আরও বেশি হয় বলে জানান তিনি।

ভবিষ্যতে এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া হবে কিনা— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদিও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে এসব নিয়ে আমার ক্যারিয়ারের কোনো চিন্তা নেই। তবে ইচ্ছা আছে মেহেদি নিয়েই কাজ করার। ইনকাম করা কখনই আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলনা, বাংলাদেশের হেনা ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় বড় আর্টিস্টদের সাথে অনেকে যখন আমার নামটাও বলে, সেখানেই আমার সার্থকতা।

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে আমার ইচ্ছা আছে নিজের একটা স্টুডিও করার। এখনো অনেক অফার পাচ্ছি মানুষকে মেহেদি ডিজাইন শিখবার জন্য। কিন্তু এখনো নিজেকে প্রস্তুত ভাবিনা। নিজেকে আরও প্রস্তুত করে ইচ্ছা আছে প্রফেশনালী হেনা টিচার হাওয়ার।

প্রতিকূলতাকে জয় করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ভূমিকায় নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদের উদ্দেশ্যে ঐশী বলেন, অন্য কেউ কি নিয়ে সফল হয়েছে সেটা না দেখে নিজে কোন জিনিস ভালো পারি সেটা চেষ্টা করা।


সর্বশেষ সংবাদ