জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ আঁখির স্বপ্ন এবার বাস্তবের পথে
সম্প্রতি জাতিসংঘের রিয়েল লাইফ হিরো হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের আঁখি। তার স্বপ্নকে এবার বাস্তবে রুপ দিতে এগিয়ে এসেছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী এবং তার স্ত্রী সারমিন সালাম। ছোট একটা গার্মেন্ট কারখানা করার মতো যন্ত্রাংশ তুলে দেয়া হয়েছে তার হাতে। শুধু তাই নয়, গার্মেন্ট স্থাপনের জন্য জমির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার রূপসা উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আঁখির স্বপ্ন পূরণের জন্য পোশাক কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আঁখির হাতে তুলে দেন সংসদ সদস্য।
তাদের দেয়া যন্ত্রাংশগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮টি বিদ্যুৎচালিত অত্যাধুনিক সেলাই মেশিন (জাকি), ৫টি পা-চালিত বাটার ফ্লাই সেলাই মেশিনসহ প্রায় পনের লাখ টাকা মূল্যমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য জানান, এই যন্ত্রাংশ দিয়ে আঁখি যাতে একটি পোশাক কারখানা শুরু করতে পারেন তার জন্য সরকারি জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে। জমি পেলেই তিনি সেখানে ঘর বানিয়ে আঁখির জন্য পোশাক কারখানা তৈরি করে দেবেন। আঁখি যাতে এ অত্যাধুনিক সেলাই মেশিনগুলো ব্যবহার করতে পারেন এজন্য তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।
এর আগে জাতিসংঘের রিয়েল লাইফ হিরো হিসেবে স্বীকৃতির পর আঁখি তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী এবং তার স্ত্রী সারমিন সালামকে। তিনি বলেছিলেন, একটি গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তুলতে চান, যে কারখানায় তার মতো অসহায় যুবতীরা কাজ করবে। অবশেষে এবার তার স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে।
দেশে এর আগে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মাস্কের সঙ্কট দেখা দিলে বাজারে চড়া দামে মাস্ক বিক্রি হতে থাকে। ওই সময় আঁখি তার সেলাই মেশিন দিয়ে মাস্ক তৈরি করা শুরু করে এবং কম দামে এলাকার লোকজনের কাছে বিক্রি করে। সহায় সম্বলহীন অনেক মানুষকে সে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করে মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা গড়ে তোলে।
পরে তার এই উদ্যোগ ওয়ার্ল্ড ভিশন নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয় যা জাতিসংঘের নজরে আসে। তারই ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা (ইউএনওসিএইচএ) গত ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে আঁখিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
ভূমিহীন ভাসমান আঁখির বাবা মাসুদ মোল্লা (৪৭) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন এবং শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। আঁখির মা আনোয়ারা বেগমও (৪০) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করেন, কিন্তু তার একার রোজগারে সংসার চালান অসম্ভব হয়ে ওঠে।