গার্মেন্টসকর্মী থেকে বিসিএস ক্যাডার, সিনেমাকেও হার মানায় সবুজের গল্প
২০০৮ উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর অর্থের অভাবে ঢাকায় এসে মাত্র ৪ হাজার টাকা বেতনে গার্মেন্টেস এ চাকরি শুরু করেন সবুজ আহম্মেদ। এর পর শুরু হয় জীবনের সাথে যুদ্ধ। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে হয়েছেন বিসিএস ক্যাডার। ঠিক যেন সিসেমার গল্প।
সবুজের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। জেলার রাণীশনকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এইচএসসি পাশের পর সহপাঠী ও বন্ধুদের অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে তখন। এসব দেখে সবুজ প্রচণ্ড হতাশ হলেন। পরে ঢাকায় এসে এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় তামিশনা ফ্যাশন নামের একটি সোয়েটার গার্মেন্টসে চাকরি নিলেন। বেতন মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা। টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় ফ্যাক্টরি, আর কাছেই এক টিনের ঘরে থাকার ব্যবস্থা হলো। একরুমে গাদাগাদি করে ৬ জন। এভাবেই প্রায় দশমাস কেটে গেল।
একদিন তিনি তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলে জানতে পারেন, সেই বন্ধুটির আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকা সত্ত্বেও তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্সে ভর্তি হয়েছেন। গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে জমানো টাকা নিয়ে ওই বন্ধুর কাছে চলে গেলেন সবুজ। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে ভর্তির ফরম জমা দিলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাত্র সতেরো দিন আগে প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষা দিয়ে সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে হলেন ১৩তম। পছন্দের বিষয় বাংলায় ভর্তি হয়েই শুরু করলেন টিউশনি। প্রায় দেড় বছর পর প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হওয়ার পাশাপাশি সারাদেশে প্রথম পাঁচজনের একজন হলেন। বিভাগীয় প্রধান ড. আমির আলী আজাদের সহযোগিতায় এক্সিম ব্যাংকের স্কলারশিপ পেলেন এবং ড. আমিরের পরামর্শেই টিসি নিয়ে চলে গেলেন রংপুরের কারমাইকেল কলেজে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি চলছিল। অনার্স শেষ করে ঢাকা কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হলেন। এর কয়েকমাস পরেই ৩৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে অংশ নিলেন।
মাঝে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি হলো তার। এরমধ্যে ক্যাডেট কলেজের লেকচারার হিসেবে যোগদানের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন। প্রথম শ্রেণির পদ হওয়ায় বিমান ছেড়ে ক্যাডেট কলেজে যোগ দিলেন। সিলেট ক্যাডেট কলেজের বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগ দিলেন, পাশাপাশি পড়াশোনা চলছিল।
পর্যায়ক্রমে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা, এমএ পরীক্ষা দিলেন। ডাক এলো বিসিএসের ভাইভার। ৩৭তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশিত হয়, এতে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন সবুজ, অর্জন করেছেন ষষ্ঠ স্থান।
সবুজ বললেন, ‘অনেক সমস্যা পার করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছি। পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই। পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে।’