৩৪ থেকে শুরু, ৩৮-এ দেখিয়ে দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের তৃপ্তি
৩৪, ৩৫, ৩৬ ও ৩৭ বিসিএসে অংশ নিয়ে প্রতিবারই অকৃতকার্য হয়েছেন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি। অবশেষে তিনি সদ্য প্রকাশিত ৩৮তম বিসিএসে সফল। সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের জন্য। সফল এ মানুষটির নাম আলেয়া জাহান তৃপ্তি।
তিনি নিজ জেলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। পরে ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন।
তৃপ্তির বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দাতিয়ারা এলাকায়। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা আলমগীর ভূইয়া ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আর মা আফরোজা খানম গৃহিনী।
আলেয়া জাহান তৃপ্তি পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্বটা একটু বেশি ছিল। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি ভীষণ মনযোগী তৃপ্তির লক্ষ্য ছিল শিক্ষক হওয়া। পড়ালেখায় বাবা-মা তাকে উৎসাহ দিয়েছেন সবসময়।
শিক্ষাজীবন শেষ করেই যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে। প্রথমে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংগঠনিক নানা কর্মকাণ্ডেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঙ্কুর অন্বেষা বিদ্যাপীঠে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে নিযুক্ত আছেন।
শিক্ষকতা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ফাঁকেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি। তৃপ্তি ৩৪, ৩৫, ৩৬ ও ৩৭ তম বিসিএসে অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। তবে প্রতিবার মন খারাপ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। মনোবল দৃঢ় রেখে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। দিনে কর্মব্যস্ত সময় পার করা তৃপ্তি বিসিএসের পড়াশোনা করেছেন মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত। পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে রাত জেগে পড়াশোনা করেছেন।
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পেরে সন্তুষ্ট তৃপ্তি। তিনি বলেন, মেয়েদের পদে পদে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করার কারণে- অনেক কাছের মানুষও আমাকে অবজ্ঞা করেছে। কিন্ত পরিবার আমাকে বরবারই সাহস দিয়েছে।
তৃপ্তি বলেন, আমি অন্য ছেলে-মেয়ের মতো ভালো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারিনি, কোচিং করারও সুযোগ পাইনি। বিসিএসের জন্য যা কিছু করেছি, সবকিছুই নিজে নিজে। মানুষের নেতিবাচক কথাগুলো আমি সবসময়ই অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছি। তবে আমার শিক্ষক ওসমান গণি সজিব আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।
এবারের বিসিএসে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। পরীক্ষার আগে কয়েক মাস সারারাত পড়াশোনা করেছি। দিনের বেলায় সময় পেতাম না বলে রাত জেগে পড়েছি। বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি যেন প্রশাসন ক্যাডার হই। কিন্তু আমার ধ্যান-জ্ঞান ছিল শিক্ষা ক্যাডার।
তৃপ্তি আরও বলেন, যদিও বাবা-মায়ের কথা রাখতে গিয়ে ফরমে প্রথম পছন্দ হিসেবে প্রশাসন ক্যাডার দিয়ে দ্বিতীয় পছন্দ দিয়েছিলাম শিক্ষা ক্যাডার। আমি মনে করি, প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারের চাকুরেরা তাদের কাজের বাইরে কিছুই করতে পারেন না। কিন্তু একজন শিক্ষক তার মনের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করে দেশ ও জাতির জন্য কাজে লাগাতে পারেন এবং অনেক মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেন। মানুষ গড়ার কারিগরের এমন পেশায় যুক্ত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।