করোনাকাল
দুরন্তদের দুঃসহ সময়
- তানভীর আহম্মেদ, গবি
- প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২০, ০৩:২৮ PM , আপডেট: ২৮ জুন ২০২০, ০৪:৪২ PM
ক্ষিপ্রতা, ছুটে বেড়ানো, স্কিল দেখানো, বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ, পেশীশক্তির ব্যবহার এবং বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপ ঘটানোর মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই হলো খেলোয়াডদের বৈশিষ্ট্য। খেলা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। খেলা একটি উৎকৃষ্ট বিনোদন পাশাপাশি খেলোয়াড এবং দর্শক দুই পক্ষেরই মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা। খেলাধুলায় আছে সম্মান, আছে পুরস্কার প্রাপ্তির অপার সম্ভাবনা। তবে খেলাই যাদের প্রাণ তাদের ক্ষেত্রে খেলা হলো শারীর এবং মনের সুস্থতার ওষুধ।
করোনাকালীন দীর্ঘ তিনমাস যাবৎ মানুষ ঘরবন্দি। এই সময়টাতে মাঠের দুরন্তদেরও দুঃসহ সময় নিয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। খেলাধুলা ছেড়ে ঘরবন্দি হয়ে বসে থাকাটা তাদের জন্য কতটা কষ্টের কিংবা খেলাধুলাবিহীন অন্য জগতে এসে কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন তারা সেটা জানবো খেলাধুলায় সেরা অন্যতম প্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) সেরা কয়েকজন খেলোয়াডদের মুখ থেকে। তাদের কথাগুলো তুলে ধরছেন-তানভীর আহম্মেদ
করোনা এসে পুরো পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সুস্থ-সবল, প্রাণবন্ত গোটা বিশ্ব এখন স্তব্ধতায় নিষ্প্রাণ। যারা খেলাধুলার জগতে আছেন তাদের জন্য অত্যন্ত জঘন্যতম সময় এটা। খেলার মাঠ ছেড়ে ঘরে বসে থাকাটা কতটা কষ্টের সেটা একমাত্র খেলোয়াডরাই বুঝে। তবুও নিজেকে ভালো রাখায় চেষ্টায় প্রতিনিয়ত কিছু করার চেষ্টা করি। কখনো গান শোনা, মুভি দেখা আবার কখনো ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, কখনো-সখনো রান্না-বান্না করা এভাবেই। তবে করোনার একটা প্লাস পয়েন্টও আছে, তা হলো খেলার মাঠ আর ক্যাম্পাসের ব্যস্ততায় পরিবারকে তেমন একটা সময় দেওয়া হতো না এবার সেটা বেশ ভালোভাবেই মিটিয়ে নিচ্ছি।
কিন্তু একজন খেলোয়াড হিসেবে নিজেকে ফিট রাখতে হয়। এক্ষেত্রে, রেগুলার ব্যয়াম করতে হয় আমার। নিয়ম করে ব্যায়ামাগারে গিয়ে ব্যায়াম করে আসি। শারীরিক কার্যক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ঘরে বসেই আমাকে সবকিছু করতে হচ্ছে। খেলাধুলাকে খুব মিস করছি, আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আবার মাঠে ফিরতে পারবো। পৃথিবীও ফিরে পাবে তার পুরনো চেহারা।
সাবিনা খাতুন, সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং অধিনায়ক, বাংলাদেশ প্রমীলা ফুটবল টিম, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
যারা খেলাধুলা করে তারা মুক্ত বিহঙ্গের মতো। এক জায়গায় আটকে থাকা তাদের কাছে কারাবাসের তিক্ততা এনে দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবী আজ থমকে গেছে। অনেকদিন হয়ে গেছে আমি মাঠে যাই না। সবুজ ঘাসের মাঠে ডাইভ দেওয়া, চিৎকার দিয়ে সবাইকে উৎসাহ দেওয়া এই কাজগুলো এখন আর হয় না। আমি আজ ঘরবন্দি। মনে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন মাঠের কোলাহল। মাঝে মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তো মাঠের বাইরে।
I just missed those days.I hope when the world goes back to the way it was,or as the people at least,i would go to the field and play once more,cause it was the cricket that made me feel alive.
জামাল আবদেল সিয়াম, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক ক্যাপ্টেন, ক্লেমন ইনডোর ইউনি ক্রিকেট টিম।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে এক নতুন অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী হলাম। এমন এক পরিস্থিতির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি যেটা কখনো কল্পনাই করিনি। করোনা যেভাবে পৃথিবীকে থমকে দিল, সেটা বারবার সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতাকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খুবই বিরক্তিময় সময় কাটাচ্ছি। যদিও বাসায় আছি, পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারছি।
কিন্তু কয়েকমাস তো হয়ে গেল। কবে নাগাদ সবকিছু স্বাভাবিক হবে, তার কোনো ঠিক নেই। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়ত খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। ক্যাম্পাসের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটাতাম। খুব মিস করছি আমার প্রিয় হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডকে। আমার স্বপ্নের এই জায়গায় যেতে না পেরে মনের মাঝে হাহাকার করছে। বাসাতে থাকায় তেমন প্র্যাক্টিসও করা হয়না। নিজেকে ফিট রাখতে যতটুকু করার, তাই করি। আশা করছি, দ্রুতই পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশ সুস্থ হবে। আবারো ফিরে যাবো ক্যাম্পাসে, ব্যস্তময় সময় কাটবে খেলাধুলা নিয়ে।
ছন্দা রাণী সরকার, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক হ্যান্ডবলার, বাংলাদেশ প্রমীলা হ্যান্ডবল দল
মহামারী করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব শুধু মন না শরীরের উপরেও বাজেভাবে আঘাত ফেলেছে। অনেক দিন ধরে মাঠের বাহিরে থাকায় যেমন শারীরিকভাবে নিজেকে ফিট রাখা কঠিন হচ্ছে তেমনভাবে খুবই বোরিং সময় কাটাতে হচ্ছে। অন্যান্য সব খেলোয়াড়দের মত আমার জন্য ও বড় চ্যালেঞ্জ নিজেকে ফিট রাখা, ফিটনেস ধরে রাখতে বাড়িতে বসেই যতটা সম্ভব ব্যায়াম করে যাচ্ছি। শুধু খেলাধুলায় না পড়াশোনাও ক্ষতির মুখোমুখি আমরা। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা আমাদের জন্য যে কতটা কষ্টের তা বলে বুঝানো যাবে না।
তবে এই কোয়ারেনটাইনের সময়ে আমি আমার পরিবারকে সব থেকে বেশি সময় দিতে পেরেছি এটা আমার জন্য অত্যান্ত আনন্দের। এছাড়াও আমার এলাকায় (গোপালগঞ্জে) কয়েকজন মিলে একটা সংগঠন তৈরি করেছি যার মাধ্যমে এলাকার গরিব-দুঃখী, অসহায়দের তালিকা করে যত দূর পারছি সাহায্য করে যাচ্ছি। আশা থাকবে, খুব তাড়াতাড়ি সব পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তারপর নিজের ফিটনেস ঠিক করে আবারও মাঠে ফিরবো। সব কিছু জয় করে আবারও ফিরতে চাই সেই চিরচেনা গণবিশ্ববিদ্যালয় মাঠে।
রিয়াজুল ইসলাম, ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং সদস্য, গণবিশ্ববিদ্যালয় কাবাডি টিম
সারাবিশ্বের ন্যায় করোনায় থমকে গেছে আমাদের প্রিয় দেশও। ভালো নেই আমরা কেউই তবুও এর মধ্য দিয়েই আমাদের ভালো থাকার পন্থা খুঁজে নিতে হবে। এখন যেহেতু সব কিছু বন্ধ তাই আমার বেশির ভাগ সময় ই কাটে পরিবারের সাথে এছাড়া বিভিন্ন গল্পের বই, উপন্যাস আর সোশ্যাল মিডিয়া তো আছেই। আর আমি যেহেতু একজন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড় তাই সারাদিনের কাজের মধ্যেও আমি চেষ্টা করি ঘরে বসে অনুশীলন করার।
একজন খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তার অনুশীলন এবং ফিটনেস। এ ক্ষেত্রে আমি ঘরে বসেই বিভিন্ন শরীর চর্চা এবং যোগব্যায়াম করছি। আমি মনে করি শরীর, মন সুস্থ রাখার অন্যতম ভুমিকা রাখে এই যোগব্যায়াম। তবে এখন শুধু প্রত্যাশা কবে ফিরে পাবো আবার সেই সুস্থ পৃথিবী, কবে ফিরে যাবো আমার প্রিয় খেলার মাঠটিতে।
তামান্না আফতাব বিন্তু, ফার্মেসি বিভাগ এবং সদস্য, গণ বিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেটবল টিম
করোনাভাইরাস এক মহামারীর নাম। সারাবিশ্বের মানুষজন এর কাছে ধরাশায়ী। সবচেয়ে কঠিন অবস্থা খেলোয়াডদেরই, কেননা খেলাধুলা, ছোটাছুটি করা এসব মানুষগুলো যেখানে অবসর থাকতে পারেনা সেখানে তাদের ঘরবন্দি জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের কারণে পরিবর্তন এসেছে আমার জীবনযাত্রার কাঠামোতেও। করোনাকালীন সারাক্ষণ বাসায় অবস্থান করতে হচ্ছে তার সাথে নিজের পড়াশোনার মানের উন্নয়ন ঘটানোর ও প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে একটা কথাই বলতে চাই, কষ্টের মাঝেও আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। তাই শুধু কষ্ট নিয়ে বসে না থেকে এই অফুরন্তু অবসর সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন এবং নিজের ভবিষ্যৎ গড়ুন, দেশের হয়ে লড়ুন।
মাহাদি শুভ, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং সদস্য, গণ বিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল টিম