চাকরির পেছনে না ছোটা সাইদুল এখন চাকরি দেন

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে ছুটতে হয়নি সাইদুল হককে (২৯)। এর আগেই টিউশনের জমানো টাকায় খামার গড়ে দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন এই যুবক। সাইদুল হক লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকার হাসমত আলীর ছেলে। তিনি ২০১৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতোকোত্তর অর্জন করেন।

এখন তিনি মাল্টা, উন্নত জাতের ডায়মন্ড আলু, মংস্য খামার, ছাগলের খামারসহ গড়ে তুলেছেন বহুমুখী খামার। সেখানে হয়েছে গ্রামের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। ফলে প্রতিদিন খামারে কাজ করে সংসারসহ ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছেন তারা।

সাইদুল হক বলেন, লেখাপড়া শেখার মানে চাকরি করা নয়। চাকরি করে নিজের সংসার চালানো সম্ভব হলেও অন্যের সংসার চালানো সম্ভব নয়। সমাজের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের সংসার চালানোর জন্যই খামার গড়ে তুলেছি। যেখানে নিজের পরিবারসহ আরও ১০টি পরিবার সচল রয়েছে। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে চাকরি দেওয়ার পথ সৃষ্টি করতে হবে। তবে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্রতা মুক্তি পাবে। দেশে জনশক্তি আছে, নেই শুধু কর্মসংস্থান।

ছোট বেলা থেকে স্বাধীনচেতা ও জেদি স্বভাবের সাইদুল হক লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগি ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় টিউশনি শুরু করেন। স্নাতোকোত্তর শেষ করার আগেই গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে খামার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন সাইদুল। এ কারণে টিউশনির জমানো আয়ে বাবা ও বড় ভাইয়ের এক একর জমি বছরে ৪০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে শুরু করেন থাই পেয়ারা বাগান।

এই তরুণ উদ্যোক্তা নিজের পেয়ারা বাগানে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামীণ দরিদ্রদের দৈনিক মজুরিতে কাজ দেন। ওই পেয়ারা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে আলু, পেঁপে, মরিচ, আদাসহ বিভিন্ন খণ্ডকালীন ফসল চাষ করা হয়। সাথী ফসলের আয়ে চলে বাগানের যাবতীয় খরচ। পেয়ারা বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতি বছর লাখ টাকার উপরে আয় করেন সাইদুল। পাঁচ বছর পর পেয়ারা বাগানে ফলন কমে আসলে পেয়ারার ফাঁকে ফাঁকে লাগান বারি-১ জাতের মাল্টার চারা। মাল্টা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে বর্তমানে রয়েছে ডায়মন্ড জাতের আলু। ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচে উৎপন্ন আলু আগামী সপ্তাহে বাজারজাত করা যাবে। ফলন ভালো হওয়ায় বর্তমান বাজার দরেও আলু থেকে লাখ টাকার উপরে আয়ের আশা করছেন তিনি।

এছাড়া ১০ জন দক্ষ শ্রমিক পরম যত্নে দেখাশোনা করে একটি মৎস্য ও একটি ছাগলের খামার। ৫৫ শতাংশের পুকুরের মাছ থেকে বছরে লাখ টাকা আয় করেন সাঈদুল। নাম দিয়েছেন সায়মা মৎস্য খামার। সাইদুলের বহুমুখী খামারের শ্রমিকরা জানান, খামারে কোন জিনিসের কিভাবে পরিচর্যা করতে হবে তা মালিক শিখিয়েছেন। যখন যা প্রয়োজন আমরা পরিচর্যা করি। এ খামারে দৈনিক কাজের নিশ্চয়তা রয়েছে। প্রতিদিন খামারে কাজ করে সংসারসহ ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছেন তারা।

নিজের ইচ্ছা শক্তিকে পরীক্ষা করতে বাবার জমি হলেও লিজ নিয়ে বাগান করার কথা জানান সাইদুল। সাথী ফসলের আয়ে বাগান বড় হলেও পেয়ারার আয়ে করেছেন মাছের ঘের। এখন মাল্টা বাগান দেখতে গ্রামের অনেকেই ভিড় করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ