ঘরবন্দী শিক্ষার্থীদের সময় কাটছে মোবাইল-ল্যাপটপে
একটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র রবিউল ইসলাম। গত ১৭ মার্চ থেকে ঘর থেকে বের হতে পারছে না রবিউল। ফলে মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপই এখন তার একমাত্র সঙ্গী। এই দুই যন্ত্রে সিনেমা দেখে ও বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েই দিন কাটে রবিউলের। রবিউল বলেন, সারাদিন ঘরে বসে তো সময় কাটে না। বাইরের রেরোনোরও সুযোগ নেই। তাই মোবাইলে বন্ধুদের সাথে ভার্চুয়াল আড্ডা দিয়ে আর সিনেমা দেখেই সময় কাটাতে হয়।
রবিউলের মতোই দিন কাটাতে হচ্ছে করোনায় ঘরবন্দী লাখো শিক্ষার্থীকে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বন্ধ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। ক্লাস-কোচিং, খেলার মাঠ, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানো, সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান কিংবা উপাসনালয়ে গিয়ে প্রার্থনা, কিছুই করার সুযোগ নেই। ফলে এখন অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রযুক্তিসামগ্রীতে নির্ভর করতে হচ্ছে ঘরবন্দি শিক্ষার্থীদের। বিশেষত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ আর টেলিভিশনই হয়ে উঠছে এ করোনা দিনে তাদের সঙ্গী। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স—এসব অনলাইন দুনিয়াই এখন তাদের জগৎ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের বড় একটি সময়জুড়ে মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকার কারণে শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনেরই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, এ ধরনের ডিভাইস একনাগাড়ে ব্যবহারের কারণে ঘাড় ব্যথা, চোখের সমস্যা, মাথা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন রয়েছে, সেটির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি কমে আসায় মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে, মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকার এ অভ্যাস আসক্তিতে রূপ নিতে পারে। এ ধরনের ডিভাইস দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ঘুমের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।
স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের ব্যবহারে পিছিয়ে নেই ছোট্ট শিশু শিক্ষার্থীরাও। পাঁচ বছর বয়সের টোটন দেব এ বছরই প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে তারও একমাত্র সঙ্গী মোবাইল ফোন। টোটনের মা ব্যাংক কর্মকর্তা সুমা দেব বলেন, বাচ্চা সবসময় ঘরের মধ্যে আটকে রাখা খুব কষ্টকর। আমাকে ব্যাংকে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই তার হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে হয়। ঘরে মোবাইলে গেমস খেলে ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে তার সময় কাটে।
তবে শিশুদের পূর্ণ বিকাশের জন্য মোবাইল ও কম্পিউটারের প্রতি ঝোঁক কমিয়ে আনার পরামর্শ চিকিৎসকদের। এ ব্যাপারে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ বলেন, শিশু-কিশোরদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন-কম্পিউটার যতটা সম্ভব দূরে রাখাই ভালো। এগুলো তাদের কল্পনাশক্তিকে সীমিত করে ফেলে। এছাড়া চোখ ও মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে।