ফাঁকিবাজদের জন্য বিসিএস প্রিলি পাসের টিপস!

গাজী মিজানুর রহমান
গাজী মিজানুর রহমান  © ফাইল ফটো

অনেকেই এমন আছেন এখন বিভিন্ন জবে যোগদান করেছেন কিংবা অন্য কারণে পড়ার জন্য বেশি সময় পান না অথবা বেশি পড়লে মনে থাকে না; মূলত এই পোস্টি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। যারা বেশি পড়তে পারেন বা বেশি পড়ার সুযোগ আছে, তারা চাইলে পোস্টটি এড়িয়ে যেতে পারেন।

এবার আসি মূল কথায়। অক্টোবরের ৩১ তারিখ বা নভেম্বর এর প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হতে পারে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সরকারি চাকরি, বিসিএসের ৪১তম সার্কুলার। এই সার্কুলারের মাধ্যমে অন্তত ২, ১৩৫ জন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড ক্যাডার অফিসার নিয়োগ দিবে সরকার। এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আমার ধারণা। এর বাইরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির আরো কয়েক হাজার নন-ক্যাডার অফিসার নিয়োগ দিবে সরকার।

যদিও ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে প্রায় ৭-৮ হাজার অফিসার নিয়োগ দিতে পারে, কিন্তু বিসিএস চাকরির জন্য আবেদন করবে আনুমানিক ৪-৫ লাখ।

আবেদনকারীর এতো সংখ্যা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ মূলত আপনার প্রতিযোগিতা হবে ৩০-৪০ হাজার এর সাথে!
অনেকে এটাকে অবিশ্বাস্য মনে করতে পারেন। এটাই বাস্তব সত্য। আমি আমার ৩৪তম-৪০তম পর্যন্ত (৩৯তম স্পেশাল বিসিএস ব্যতীত) ৬টি বিসিএস প্রিলির বাস্তব ও সফল অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। অনেকেই আছে শুধু পরীক্ষার দেয়ার জন্য পরীক্ষা দেয়। অনেকে আছে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। কিন্তু কেউ কেউ ক্যাডার বা একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দেয়।

মূলত যারা ক্যাডার বা একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দেয় তাদের সাথেই আপনার কম্পিটিশন হবে। বাকিদের আপনার কম্পিটিটর না ভাবাই ভালো।

এবার আসুন, জেনে নেই কীভাবে আপনি এই ৩০-৪০ হাজার প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে নিজের অবস্থান ঠিক করে নিবেন অল্প সময়ে প্রস্তুতির মাধ্যমে- আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, ‘আমি প্রিলি দিচ্ছি রিটেন পরীক্ষায় qualify করার জন্য; ২০০ নাম্বারের বিসিএস প্রিলির সিলেবাস শেষ করার জন্য নয়, কিংবা ২০০ নাম্বারের মাঝে ১৭০-১৮০ পাওয়ার জন্যও নয়। আমি প্রিলি দিবো যেন রিটেন পরীক্ষা দেয়ার জন্য PSC-এর ডাক পাই।’

জাস্ট এইটুকু আপনি মাথায় রাখুন। কারণ বিসিএস প্রিলির নাম্বার সাধারণ বিসিএসের ক্ষেত্রে যোগ হয় না। রিটেন ও ভাইয়ার ভিত্তিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নির্ধারিত হয়। তাই আপনার আগে দরকার প্রিলিটা পাশ করা।

সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রিলি পাশ করতে যা যা করবেন-

১। আপনি প্রথমে ‘BCS Preliminary Analysis’ বইটি A-Z পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ২-৩বার শেষ করুন বোঝে বোঝে পড়ে। তবে না বোঝে মুখস্থ করা চলবে না। এই বইটির কথা বলছি এই জন্য যে, বইটি বিগত সালের বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন Analysis করে রচিত। ফলে আপনি সহজেই বোঝতে পারবেন কোন টপিকটি বিসিএস প্রিলির জন্য বেশি Important আর কোন টপিকটি তুলনামূলক কম Important। আর আপনি যদি বোঝতে পারেন যে, কোনটি বেশি Important আর কোনটি কম Important তাহলে আপনার প্রিলির প্রস্তুতি ৫০% এখানেই শেষ।

২। এরপর বিসিএস প্রিলি প্রশ্নব্যাংক বা জব সল্যুশন শেষ করুন ভালোভাবে ব্যাখ্যাসহ পড়ে। কেননা বিগত সাল থেকে হুবহু অনেক প্রশ্ন কমন আছে। তবে আমি এই ক্ষেত্রে বলবো যাদের হাতে সময় বেশি আছে তাদের জব সল্যুশনটা শেষ করাটাই বেস্ট হবে, আর হাতে সময় কম থাকে অবশ্যই বিসিএস প্রিলি প্রশ্নব্যাংক পড়তে হবে।

৩। যেহেতু ম্যাথ বোঝার ও প্র‍্যাক্টিসের বিষয়। ম্যাথে যত বেশি প্র‍্যাক্টিস করবেন, তত বেশি ভালো ফল পাবেন। তাই আপনি যদি ম্যাথে বেশি দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে ক্লাস ৪-১০ এর ম্যাথ বইগুলো (সৃজনশীল) শেষ করুন। কারো হাতে এতো বেশি সময় না থাকলে MP3 Math/Shahin's মাথ যে কোনো একটা বই শেষ করলেই হবে আশা করি। (তবে আপনি ক্লাস ৪-১০ এর ম্যাথ বইগুলো ধৈর্য সহকারে শেষ করতে পারেন তাহলে বিসিএস রিটেন ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় খুব কাজে দিবে সেটা আমি হলফ করে বলতে পারি।)

৪। প্রতিমাসে আপডেট থাকার জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সটি পড়বে।

৫। তারপর বাজার থেকে ভালো দেখে ১/২টি বিসিএস মডেল টেস্ট কিনে টাইম ধরে নিজে নিজে বাসায় বসে পরীক্ষা দিন। যদি আপনি বাসায় মডেল টেস্ট দিয়ে ১৫০ বার তারও বেশি পান তাহলে ধরে নিবেন আপনার বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি ভালো। যদি বাসায় ১৫০ এর কম পান তাহলে ধরে নিবেন আপনার প্রস্তুতি আরো ভালো করতে হবে।কেননা, বাসার পরিবেশ আর পরীক্ষার হলে পরিবেশ এক নয়। তাই বাসায় একটু বেশি নাম্বার পেতে হবে। তবে যে কোনো বিসিএস প্রিলির প্রশ্নে ১২০ নাম্বার পেলে আপনি আপনি রিটেন দিবে পারবেন মোটামুটিভাবে নিশ্চিত থাকুন।

৬। আপনি মডেল টেস্ট দেওয়ার পর যদি দেখেন যে, বার বার কোনো বিষয়ে কম নাম্বার পাচ্ছেন, তাহলে সেই বিষয়ে বেশি জোর দিন। যেমন ধরুন, আপনি বিসিএস মডেল টেস্টে ইংলিশে কম নাম্বার পেয়েছেন, তাহলে পরবর্তীতে ইংলেশে বেশি জোর দিবেন। তারপর আবার ভিন্ন প্রকাশনীর (অবশ্যই ভালো হতে হবে) আরেকটি মডেল টেস্ট বই কিনে নিজেকে পুনরায় যাচাই করুন।

আশা করি, আপনি যদি এইভাবে প্রস্তুতি নেন তাহলে ভালো ফল পাবেন। কারণ আমার এই টিপস ফলো করে ৪০তম বিসিএসে অনেকেই ভালো ফল পেয়েছেন। ইনশাআল্লাহ, আপনি ফলো করলে আপনিও ভালো ফল পাবেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, যারা একেবারেই নতুন কিন্তু পড়ার অনেক সময় আছে হাতে, এইবার বা সামনে বিসিএস দিবেন, তারা উপরের সাজেশনটি ফলো করার পাশাপাশি যে কোনো সিরিজের (যেমনঃ প্রফেসর’স/MP3) একসেট বই পড়বেন।

* মনে রাখবেন, ‘কম পড়বেন কিন্তু Important বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়বেন।’

* আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, ‘একটি ভালো বই আর আরেকটি ভালো সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে আপনার পুরো জীবন।’

* সকল সৎ পরিশ্রমীর জন্য শুভ কামনা রইল।

* ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।

লেখক: ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার ও সাবেক সিনিয়র অফিসার, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড


সর্বশেষ সংবাদ