পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও শুনি- বিসিএস হয়নি?
কিছুদিন আগের কথা। ‘শিক্ষকতাই প্রিয় আসিফের, যোগ দিলেন না বিসিএসের পররাষ্ট্র ক্যাডারে’ শিরোনামে একটি সংবাদ ভাইরাল হলো। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে জয়েন করেননি তিনি। এতেই সবাই মুগ্ধ। টাইমলাইনজুড়ে এই সংবাদের জয়জয়কার। ঘটনাটি যে অস্বাভাবিক!
আনিসুল হক ‘গদ্য কার্টুন‘ ট্যাগলাইনে শুক্রবার প্রথম আলোতে একটি কলাম লিখেন। এ কলাম থেকে জানলাম- পত্রিকায় সংবাদ হয়েছে পুলিশের এক ওসি চায়ের দোকানের বকেয়া বিল পরিশোধ করেছেন!
হিসাববিজ্ঞানের ভাষায়, এটি অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি হতে পারতো। পুলিশ চায়ের দোকানের বকেয়া বিল দেবে না এটাই স্বাভাবিক। একজন পুলিশ অফিসার যেহেতু বিল পরিশোধ করেছেন। এটা অস্বাভাবিক। তাই সংবাদ হয়েছে।
যেদেশে বিসিএসের পরিবর্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা বেছে নিলে এখনও সংবাদ ভাইরাল হয়, সেদেশে নিউজ পেপার’স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব) বিবৃতি দিয়ে ‘সেরা ছাত্ররা বিসিএস ক্যাডার‘ বললে এতো অবাক হওয়ার কী আছে!
যখন সাংবাদিকতা করতাম, সিনিয়রদের মুখে সাংবাদিকের বিয়ে নিয়ে একটা গল্পটা প্রায়শ শুনতাম- কণনপক্ষ জিজ্ঞেস করেছে, ছেলে কী করে? জবাবে পাত্রপক্ষ বলছে, ছেলে সাংবাদিকতা করে।কণেপক্ষ পাল্টা প্রশ্ন করেছে- সাংবাদিকতা করে বুঝলাম। কিন্তু তার চাকরীটা কী?
সাংবাদিকতা ছেড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেছি। প্রতিবেশী-আত্মীয়-স্বজন জিজ্ঞেস করেন, এখন কী চাকরি করো? শিক্ষকতা করি। উত্তর শুনে একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, বিসিএসটা হয়নি তাহলে?
সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, বিসিএস নিয়ে সমাজের যে আরোপিত মনোভাব তা বুঝতে প্রচলিত এসব গল্প বা সংবাদকে হালকা ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। সমাজে বিসিএসের প্রতি এই যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা একদিনে হয়নি। নোয়াবের মতো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের বিবৃতিও সমাজের এমন পারসেপশানকে ঘনীভূত করবে।
যাহোক নোয়াব বলছে, সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবসম্মত নয়। বক্তব্যের এ স্পিরিটের সাথে হয়তো আমি একমত। অষ্টম ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী একজন স্টাফ রিপোর্টারের বেতন ৩৮ হাজার টাকা। নবম ওয়েজবোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী এটি ৬৭ হাজার টাকা। নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন হলে সাংবাদিকতার একজন শুভাকাক্ষী হিসেবে আমিও খুশি হতাম। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
যে গুটিকয়েক সংবাদপ্রতিষ্ঠানে অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন হয়, এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের এক সংবাদকর্মীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিলো। তিনি জানালেন, কাগজপত্রে তাকে অষ্টমওয়েজবোর্ড (স্টাফ রিপোর্টার) দেখানো হলেও তিনি ২৫ হাজার টাকার মতো বেতন পান। বেসিক বেতনটা ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী পেলেও মোট বেতনে অন্যান্য ভাতা কর্তন করে কমিয়ে দেয়া হয়। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়িত হয় এমন প্রতিষ্ঠানেরই এই অবস্থা! বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো বেতন-ভাতাই দেয় না, ওয়েজবোর্ড মানা তো বহুদূরের কথা।
তাই এখন নবম ওয়েজবোর্ডের দাবি না তুলে, অষ্টম ওয়েজবোর্ড কার্যকরে মনোযোগী হওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানগুলো অষ্টম ওয়েজবোর্ড কার্যকর করছে কিনা এ বিষয়ে তদারকি হওয়া প্রয়োজন। কমিটি/কমিশন গঠন করে মনিটরিং করা হোক।
সমাজের মনস্তত্ত্ব, চাকরির কর্মপরিবেশ, ছুটি, প্রণোদনা ইত্যাদির দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। এসব বিষয়ে সমন্বিত নীতিমালা চাই। নীতি শুধু নথিতে আটকে থাকলে চলবে না, এসব কার্যকরে সক্রিয় হতে হবে। তা না হলে, মেধাবীরা বিসিএসে যাবে। তখন নোয়াবের মতো কেউ ‘সেরা মেধাবীরা বিসিএস ক্যাডার‘ বললে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। (ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)
লেখক: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।
পড়ুন: এবার বৃদ্ধর হাতে রিক্সা তুলে দিলেন ছাত্রলীগ সম্পাদক রাব্বানী (ভিডিও)