১২ জুন ২০১৯, ১৫:৩১

১২ জুন: হাজারটা স্বপ্নভঙ্গের পর সব ফিরে পাওয়ার দিন

২০১৮ সালের ১২ জুন। রমজান মাস চলছে। অনেক ক্লান্ত ছিলাম; তাই অফিস থেকে এসে চার হাত-পা চার দিকে দিয়ে শুয়ে আছি। হঠাৎ এক বন্ধু ফোন দিয়ে বললো ৩৭তম বিসিএস-এর রেজাল্ট দিয়েছে। রেজাল্টের কথা শুনে আমার তো আত্মা খাঁচা থেকে বের হওয়ার অবস্থা। ফেসবুকে ঢুকে দেখি অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ লিখে পোস্ট দিচ্ছেন। তিন তিনবার ভাইবা বোর্ড থেকে ক্যাডারবিহীন ফিরে আসায় রেজাল্ট দেখতে ভীষণ ভয় পাচ্ছিলাম। গলা শুকিয়ে রীতিমতো কাঠ হয়ে যাচ্ছিল।

অনেকেই আবার ফোন দিয়ে রেজাল্টের খবর জানতে চাচ্ছিলো। উত্তর দিতে পারছিলাম না। তাই অনেকটা সাহস নিয়েই রেজাল্টের কপি ডাউনলোড দিয়ে কিছুক্ষন চোখ বুজে শুয়েছিলাম। মনে মনে ভাবলাম রেজাল্টটা এবার না হয় দেখি! কপালে যা আছে তা তো হয়েই গেছে। দোয়া-দরুদ পড়ে রেজাল্ট শীট ওপেন করে সোজা চলে গেলাম নন-ক্যাডারে। বারবার নন-ক্যাডার হওয়ায় প্রথমেই ক্যাডার লিস্টে নিজের রোল খোঁজার সাহস পাচ্ছিলাম না। নন-ক্যাডারে গিয়ে দেখি সেখানেও আমার রোল নেই।

মনে মনে ভাবলাম স্যার কি তবে আমাকে ভাইবাতে ফেল করিয়ে দিল? পুলিশ ক্যাডার যেহেতু প্রথম চয়েজ তাই ভাবলাম ওখানে একটু দেখি! ১০০ জনের তালিকার নিচ থেকে দেখা শুরু করি।উপরের দিকে যাই কিন্তু আমার রোল তো আর খুঁজে পাই না। হঠাৎ চোখ আটকে যায় প্রথম সারির ৮ নম্বর রোলটার দিকে। এ যে আমারই রোল! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এডমিট বের করে দেখি- সত্যিই তো এটা আমার রোল।

আনন্দের আতিসয্যে চিৎকার দিয়ে উঠি। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় সাথে সাথেই সিজদায় নত হয়ে পড়ি। সিজদায় পড়ে আমার সে কি কান্না! কান্না মুছে কাউকে ফোন দিয়ে জানাব সে শক্তিও পাচ্ছিলাম না। কান্নার ঢেউ যেন অবিরাম বেড়েই চলেছে। সিজদা থেকে উঠে অবচেতন মনে বাবার নাম্বারে ফোন দিই। পরক্ষণেই মনে হয় বাবা তো বেঁচে নেই।

ভাইয়া ও আম্মাকে ফোন দেয়ার পর রেজাল্ট শুনে দেখি তারাও কাঁদছেন। ফোনের এ পাশে কাঁদছি আমি আর ও পাশে কাঁদছে তারা। এ যে আনন্দের কান্না, এ যে হাজারটা স্বপ্নভঙ্গের পর স্বপ্ন পূরণের কান্না। আনন্দের কান্না যে এত মধুর হয়; তা আমার আগে কখনো জানা ছিলো না।

১২ জুন দিনটাকে চাইলেও আমি কখনো ভুলতে পারবো না। জীবন সায়াহ্নে গিয়েও কেউ যদি আমাকে জীবনের স্মরণীয় দিন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে আমি চোখ বন্ধ করে ১২ জুনের কথা বলে দিব। কারণ এ যে আমার স্বপ্নপূরণের দিন, সব হারিয়ে সব ফিরে পাওয়ার দিন। (ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)

লেখক: মো. দিদারুল ইসলাম, পুলিশ ক্যাডারে ৮ম, ৩৭তম বিসিএস।