জীবন পরিবর্তনকারী শেষ ৪ দিনের চ্যালেঞ্জ!
আজ ৪০তম BCS প্রিলি পরীক্ষার সিটপ্ল্যান দিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে। আজ সোমবার। সেই হিসেবে মাঝখানে আছে মাত্র ৩ দিন। কিন্তু আমি শিরোনাম দিয়েছি ‘জীবন পরিবর্তনকারী শেষ ৪ দিনের চ্যালেঞ্জ’। এখানে ১ দিন বাড়িয়ে বলা হয়েছে। কারণ পরীক্ষার আগের ৩ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দিনটা। আরো Specific করে বললে, ৩ মে ২০১৯ সালের রোজ শুক্রবারের সকাল ১০টা-১২টা, এই ২ ঘণ্টার সময়টুকু।
এই দুই ঘণ্টার চ্যালেঞ্জটুকু ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারলে আপনার জীবন বদলে যেতে পারে। হয়ে যেতে পারেন সরকারি ফার্স্টক্লাস অফিসারের একজন পথযাত্রী। যদিও বিসিএস প্রিলি পাশ করলেই আপনি বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাবেন, বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু বিসিএস হওয়ার স্বপ্ন পূরণের এটিই প্রথম ও ক্রিটিক্যাল পার্ট। কারণ এই প্রিলিতে বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করবে, আর এই প্রিলি পাশ করতে না পারলে রিটেন, ভাইভা দেয়া যাবে। প্রিলি পাশ করলেই বাকিগুলো পাশ করা তুলনামূলক কিছুটা সহজ।
তো এখন প্রশ্ন হলো, ‘এই মুহূর্তে কি কি পড়া উচিত আর কি কি করা উচিত?’ আমি বলবো আপনার প্রস্তুতি খারাপ বা অসম্পূর্ণ এই মুহূর্তে এটা মাথায় আনবেন না। নিজের প্রতি নিজে আস্থা রাখুন যে, ‘‘আমি পারবো, আমাকে এই প্রিলি পাশ করতেই হবে।’’ সেজন্য প্রস্তুতি নিয়ে দু:চিন্তা না করে এখন শুধু Important টপিকগুলো বারবার রিভিশন দিন। বিশেষ করে যে টপিকগুলো পরীক্ষায় বারবার আসে কিন্তু ভুল বেশি হয়, এমন কমন টপিকগুলো। যেমন- English Preparation, Phrases & Indioms, সাধারণ ও বাংলায় বিভিন্ন সাল ও নাম ইত্যাদি।
আমি আবারো বলছি, আপনি এই মুহূর্তে শুধু BCS প্রিলির জন্য Important এমন টপিকগুলো বারবার পড়ুন (কোন কোন টপিকগুলো বেশি Important তার জন্য ‘‘BCS Preliminary Analysis’’ বইয়ে প্রদত্ত সাজেশনটি ফলো করলে বেশি উপকৃত হবেন আশা করি)।
Important টপিকগুলো বারবার এজন্য পড়বেন, কেননা এই টপিকগুলো থেকে প্রশ্ন থাকবে নিশ্চিত। কমনও পাবেন অনেক, কিন্তু পরীক্ষার হলে কনফিউজড হয়ে গেলে নেগেটিভ মার্কসই আপনার লালিত স্বপ্নকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
২। সাম্প্রতিক সব না পড়ে কেবল পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়ুন। বাজারে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের অনেক বই পাবেন, কিন্তু সেখানে ভুলের পরিমাণ অনেক বেশি। তার চেয়ে বড় কথা হলো এসব বইয়ে অপ্রয়োজনীয় তারিখ ও ঘটনার বর্ণনা দেয়া। আপনি বোঝতেই পারবেন না যে, কোন তারিখ আর কোন সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার জন্য Important. (সেজন্য ‘BCS Real Model Test’ বইয়ের প্রথম অংশে যে সাধারণ জ্ঞান আছে তা পড়ে নিতে পারেন। এই বইয়ে অপ্রয়োজনীয় তারিখ যা পরীক্ষায় আসার মতো না, তা পরিহার করা হয়েছে ও অপ্রয়োজনীয় সাম্প্রতিক তথ্য পরিহার করা হয়েছে।)
৩। চাইলে যে কোনো ভালো একটি মডেল টেস্ট বই থেকে এখন নতুন করে ২ টি মডেল টেস্ট ঘড়ি ধরে দিয়ে দেখতে পারেন, কত পান দেখুন। যে সাবজেক্টে কম পান যে সাবজেক্টটি ভালো করে পড়ুন।
৪। ম্যাথ বা ইংলিশ অথবা দুটি বিষয় নিয়ে যাদের চিন্তা বেশি, সেই চিন্তা বাদ দিন। কারণ প্রিলিতে ম্যাথ ১৫ মাত্র, ইংলিশ ৩৫, মানে মোট ৫০। সেখান থেকে মাঝারি মানের পরীক্ষার্থীরা অনায়সে ২০-২৫ পেয়ে থাকেন সাধারণত। আর বিসিএস প্রিলিতে আলাদাভাবে পাশ করতে হয় না, সবমিলিয়ে ১২০ এর মতো পেলেই আপনি সেইফ জোনে থকবেন, আশা করা যায়। সাধারণ জ্ঞানের ১ টি প্রশ্নে জন্য যেমন ১ নম্বর পাবেন, আবার বড় একটি ম্যাথের জন্যও ১ নম্বরই পাবেন।
৫। Vocabulary মনে না থাকলে, এখন শুধু বিগত সালে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা Vocabulary গুলো MCQ আকারে পড়ুন, মনে থাকবে বেশি এবং কমনও পাবেন আশা করি।
৬। পরীক্ষার আগের দিন অন্তত আপনার মতো যে বিসিএস পরীক্ষার দিবে এমন একজনকে বেছে নিয়ে একজন আরেকজনকে শুধু পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সাল তারিখ, নামগুলো জিজ্ঞেস করে আলোচনার মাধ্যমে পড়লে ভালো ফল পাবেন পরীক্ষার হলে। কারণ এইভাবে মনে বেশি থাকে। (আমি তাই করতাম আমার রুমমেটের সাথে)
৭। পরীক্ষার হলে আমার মতে সাধারণ জ্ঞান বা বাংলা দিয়ে উত্তর শুরু করা উচিত; সাধারণ গণিত সবার পরে উত্তর করা উচিত । কারণ সাধারণ জ্ঞানে বেশি নাম্বার উঠাতে পারলে কনফিডেন্স বেড়ে যাবে। আর গণিত যত ভালো পারুন না কেন বেশিভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে ২-১ বড় বা ঝামেলাপূর্ণ গণিত থাকেই। গণিত করতে গিয়ে সময় বেশি চলে গেলে পরে সময়ের চিন্তা মাথা গরম হয়ে গেলে পরীক্ষা আর ভালো হবে না।
৮। অপশনে সঠিক উত্তর না থাকে প্রচলিত উত্তরটি করে আসবেন। যেমন দিলো "রঙ্গিন টেলিভিশন থেকে কোন রশ্মি বের হয়?" সঠিক উত্তর: মৃদু রঞ্জন রশ্মি না থাকলে, প্রচলিত উত্তর "গামা রশ্মি" দিবেন।
৯। আপনি দুটি বা ৩ টি উত্তর সঠিক থাকলে সবচেয়ে প্রচলিত উত্তরটি দিবেন। যেমন- প্রশ্ন: নিজের কোন উপজাতিটি পিতৃতান্ত্রিক পরিবার? ক। মারমা গ। খাসিয়া। গ। সাঁওতাল ৪। গারো। এখানে অপশন (ক) ও (গ) দুটিই সঠিক।কিন্তু বেশি প্রচলিত হলো ‘মারমা’। তাই এখানে ‘মারমা’ উত্তর করাই শ্রেয়।
১০। প্রশ্নে ভুল থাকলে যেমন টাইপিং বা প্রিন্টিং মিস্টেক, সেটা বোঝা গেলে সেই প্রশ্ন ধরে উত্তর করবেন।
১১। পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম হওয়া আবশ্যক। না হয় পরীক্ষার হলে মাথা কম কাজ করতে পারে।
১২। পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্তত ১ ঘন্টা আগে পৌঁছার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে সাথে বই নিয়ে কেন্দ্রে সামনে পড়বেন।
আমি এখানে আমার ৩৪তম-৩৮তম টানা ৫টি বিসিএস প্রিলি পাশ করার অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করলাম। এরা দ্বারা কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক। ধন্যবাদ সবাইকে। শুভ কামনা রইল।
লেখক: গাজী মিজানুর রহমান স্যার
*৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার
*সাবেক সিনিয়র অফিসার
(পূবালী ব্যাংক লিমিটেড)
*সাবেক সহকারী শিক্ষক, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
(৩৪তম বিসিএস নন-ক্যাডার)
*১০ম NTRCA (প্রভাষক)
*সাবেক প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক: BCS টেকনিক
(BCS স্পেশাল প্রাইভেট প্রোগ্রাম)
লেখক: BCS Preliminary Analysis (বাংলাদেশের প্রথম সাজেশনভিত্তিক BCS প্রিলির পূর্ণাঙ্গ বই)
(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে)