‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ এক বছর

  © ফাইল ফটো

যাত্রাটা ২০১৮ সালে। আজকের এই দিনে। সরকারি চাকরিতে কয়েক দশক ধরে চলে আসা কোটা ব্যবস্থার প্রতিবাদে এদিন প্রাথমিকভাবে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সমন্বয় রেখে ঢাকার বাইরেও বেশ কয়েকটি স্থানে ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর শুধু এগিয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাটফর্মটির কর্মকাণ্ড যেমন বেড়েছে, তেমনি ছড়িয়েও পড়ে দেশব্যাপী। মূলত এসব বিষয়কে সামনে রেখেই কেন্দ্র ছাড়াও কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ৫ দফা দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়েছে সারাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থী ও সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীরা। মানববন্ধন থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, এরপর বিক্ষোভ। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল তাদের আন্দোলন বিস্ফোরকের মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। 

এদিন দেশের প্রায় সবকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। ঢাকার শাহবাগে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। হাজার শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করার পর রাতে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।  শিক্ষার্থীরা এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ভবনে ভাঙচুর করে এবং গাড়ি, আসবাবপত্রে আগুন লাগিয়ে দেয়। টানা আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাবি মেনে নিয়ে জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।

তাদের ৫ দফা দাবির মধ্যে ছিল-বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা; কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া; কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেওয়া; সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা। 

এক বছর পূর্তি উপলক্ষে রবিবার ঢাবির টিএসসিতে কেক কাটা হয়। ছবি: সংগৃহীত

তাদের আন্দোলনের ফলে ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটা ব্যবস্থা ছিল তা বাতিল হয়ে গেল। পরিপত্রে বলা হয়, সব সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ থেকে ১৩ তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে এবং বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।

জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল এই আন্দোলনে। এরপর তারা ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়েও নানা কর্মসূচি পালন করে। এইর প্রেক্ষিতে প্রশাসন দ্বিতীয় বার পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সর্বশেষ, ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছে এ প্লাটফর্মটি।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমরা কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার হামলার শিকার হয়েছি। আজকে আমাদের সে সংগঠনের এক বছর। এক বছরের এ সফলতার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আগামীদিনেও ইনশাল্লাহ আমরা শিক্ষার্থীদের সব নৈতিক দাবি আদায়ে তাদের পাশে থাকবো।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ন আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো সবচেয়ে বেশি। কিন্তু স্বৈরশাসন পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির এ যুগে রাজনৈতিক দলের বাইরে সাধারণত শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ ধরণের একটি সংগঠন প্রশংসা যুগিয়েছে। রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলে না। আমরা এ সংগঠনটির মাধ্যমে কোটা সংস্কার, প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়ে সফল হয়।

তিনি বলেন, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুভূতি সত্যিই খুবই ভালো। আশা করি আগামী দিনেও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে পারব। তাই আমরা মনে করি শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায়ে ডাকসু নির্বাচনে এ সাংগঠনকেই বেছে নিবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence