আমি না হয় দেশ হারিয়েছি, দেশের জন্য তো কিছু করতে পেরেছি!
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির বিকাল। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকজন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। সেই কয়েকজনের জমায়েত পরে পরিণত হয় লাখো তরুণ-ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে। শাহবাগের সেই আন্দোলন নাম ধারণ করে গণজাগরণ মঞ্চ। এই আন্দোলনের পথ ধরে শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসিই নয়, যুদ্ধাপরাধের বিচারও পায় একটি স্বতন্ত্র পথ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং তরুণ প্রজন্মের মনোজগতে মৌলিক পরিবর্তন এনেছে এই মঞ্চ ও আন্দোলন।
সেদিন বিকালে যে কয়জন তরুণের হাত ধরে সূত্রপাত হয়েছিল শাহবাগ আন্দোলনের, তাদেরই একজন মাহমুদুল হক মুন্সী (বাঁধন স্বপ্নকথক)। শাহবাগ জমায়েতের সূত্রপাতকারী ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই নেটওয়ার্কের আহবায়ক ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।
সেই বাঁধন বর্তমানে ইউরোপের দেশ জার্মানিতে শরনার্থী হিসেবে বসবাস করছেন। এগার বছর আগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের শুরু এবং পূর্বাপর কয়েকটি দিক নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
তাঁর বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলো সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বড় সহযোগিতা করেছিলো আওয়ামী লীগ। আমি মনে করি, আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে দেশকেও কিছু দিতে পেরেছি। আর যা প্রাপ্তি, তার জন্য এই বিদেশ বাসেও কষ্ট লাগে না। আমি না হয় দেশ হারিয়েছি, দেশের জন্য তো কিছু করতে পেরেছি! আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।”
তাঁর বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
“সেই দিনটা থেকে অনেক প্রশ্ন উঠেছে অনেক প্রশ্ন উঠবে। মূল প্রশ্নটা ছিলো এই আন্দোলন থেকে প্রাপ্তি কী? মিডিয়াকর্মীদের এই প্রশ্নের জবাবগুলিতে আমি বলতাম একটা সর্বগ্রাসী আন্দোলনের প্রাপ্তি তো তাৎক্ষনিক বোঝা যায় না। আপনাকে ৫ বা ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর এইসব রাজাকারের সর্বোচ্চ শাস্তি, এগুলি শুধু সাময়িক শান্তি।
আরও পড়ুন: যেভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে গণজাগরণ মঞ্চ
আন্দোলনের ৫ বছর পার হয়েছে। একটা জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেলো কয়েকদিন আগে। আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, আমি খেয়াল করেছি। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবগুলি দল মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছে, বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছে। জামায়াতের কথা জিজ্ঞাসা করে খামোস-ধমকি শোনা লেগেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দৃষ্টান্ত একদমই বিরল। এর আগে আমরা রাজাকার বলে কিছু নেই, রাজাকার ক্ষমতায় ইত্যাদি দেখে এসেছি। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। যার দেখানো পথে আজ বাংলাদেশ চলছে। এটা আমার একার না, এই আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর অহংকার।
বিডিনিউজ-এর এক আলোচনা সভায় আমি বলেছিলাম, খালেদার জন্য দ্বার খোলা আছে। জামায়াতকে ছেড়ে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে শাহবাগে আসতে হবে। তা না হলে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে যাবে বিএনপির নাম। সেদিন বহু কথা শুনতে হয়েছে। ফেরার পর পিজির আড়াই তলায় মারুফ (মারুফ রসুল) ইমরান সাহেবের (ইমরান এইচ সরকার) কাছে অনুযোগ করে, এই কথা আমি কেন বলেছি, আমরা বিএনপির বিরুদ্ধে কোন কথা বলবো না। ইমরান সাহেব আমাকে এক প্রকার প্রশ্নোত্তরের সম্মুখীন করেন। আমার জবাব ছিলো, মারুফ ছাত্র ইউনিয়ন করা ছেলে, তাদের পার্টি বিএনপির বিরুদ্ধে কিছু বলে না, সেটা আমার দায় না। বিএনপি আজ অস্ত্বিত্বের হুমকির সম্মুখীন। কেন, তার বিচার আপনারাই করবেন।
কাপড় কাচলে ফেনা তৈরি হয়। কাপড় পরিস্কার হয়, ফেনা পানিতে ভেসে যায়। এরকম বহু বড় বড় ফেনাওলা বুদবুদ পানিতে ভেসে গেছে, যাবে। কাপড় কিন্তু পরিস্কার হয়েছে। আমাদের ভেতরকার বহুজন ফেনা হয়ে এ রকম পানিতে ভেসে গেছে, যাবে।
এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলো সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বড় সহযোগিতা করেছিলো আওয়ামী লীগ। আমি মনে করি, আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে দেশকেও কিছু দিতে পেরেছি। আর যা প্রাপ্তি, তার জন্য এই বিদেশ বাসেও কষ্ট লাগেনা। আমি না হয় দেশ হারিয়েছি, দেশের জন্য তো কিছু করতে পেরেছি! আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।