আর শোনা যাবে না আবু ওবায়দার ভাষণ
দখলদার ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা নিহত হয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতেই ইসরায়েলের একটি আক্রমণে তিনি শহীদ হলেও আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হামাস। একই সঙ্গে শহীদ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারসহ আল কাসসাম ব্রিগেডের আরও কয়েকন শীর্ষ নেতার নিহত হওয়ার খবরও স্বীকার করেছে সশস্ত্র সংগঠনটি।
তবে প্রথমবারের মত আবু ওবায়দার নিহতের খবরের সঙ্গে সঙ্গে নতুন মুখপাত্রের নাম ঘোষণাও করা হয়েছে। ভিডিও বার্তায় নতুন মুখপাত্র প্রথমবারের মত আবু ওবাইদার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেন। তিনি জানান, আবু ওবায়দার আসল নাম ছিল হুদাইফা সামির আবদুল্লাহ আল-কাহলুত। নতুন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা গর্বের সঙ্গে মহান নেতা আবু ওবায়দার শাহাদাত ঘোষণা করছি। আমরা তার উপাধি উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছি।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত মে মাসে দাবি করে যে তারা হামাসের সাবেক নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করেছে। এর তিন মাস পর আবু ওবায়দাকেও হত্যার দাবি করে দখলদার দেশটি। সোমবার হামাস উভয় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। ভিডিও বার্তায় বলা হয়, দেইফের মৃত্যুর পর মোহাম্মদ সিনওয়ার অত্যন্ত কঠিন এক পর্যায়ে ব্রিগেডের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দেন।
আবু ওবায়দা গাজায় হামাসের অন্যতম প্রধান কণ্ঠস্বর ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে স্বল্পস্থায়ী এক যুদ্ধবিরতির সময় তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের আপডেট, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং ইসরায়েলি বন্দির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তি চুক্তি নিয়ে বিবৃতি দিতেন। ওই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল একতরফাভাবে ভেঙে দেয়। তার সর্বশেষ বিবৃতি আসে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে, যখন ইসরায়েল গাজা শহরে নতুন সামরিক অভিযানের প্রাথমিক ধাপ শুরু করে, এলাকাটিকে যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা করে এবং শত শত আবাসিক ভবন ধ্বংস করে, যার ফলে ফিলিস্তিনিরা ব্যাপকভাবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
নতুন মুখপাত্র আল কাসসাম ব্রিগেডের আরও কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাফাহ ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ শাবানাহ ও হাকাম আল-ইসি ও রায়েদ সা’দ। এর মধ্য দিয়ে গত দুই বছরে হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার তালিকা আরও বড় হল। এর মধ্যে রয়েছেন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, ১৯৯০ এর দশকে আল কাসসাম ব্রিগেডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ এবং রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া, যিনি ইরানের রাজধানী তেহরানে নিহত হন।
নতুন মুখপাত্র বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জানান, বারবার ইসরায়েলি লঙ্ঘন সত্ত্বেও গোষ্ঠীটি দুই মাসেরও বেশি আগে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, যতদিন দখলদারিত্ব থাকবে, ‘আমাদের জনগণ আত্মরক্ষা করবে এবং অস্ত্র ত্যাগ করবে না। আমরা আত্মসমর্পণ করব না, প্রয়োজনে নখ দিয়ে লড়াই করলে।’ তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি মানতে চাপ দেয় এবং সতর্ক করে দেন যে লঙ্ঘনের জবাব দেওয়ার অধিকার গোষ্ঠীটির রয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১১ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে অন্তত ৪১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ হাজার ১৪৫ জন আহত হয়েছে, পাশাপাশি ৬৮০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ২৬৬ জনে এবং আহত হয়েছেন ১ লক্ষ ৭১ হাজার ২২২ জন।