চাপ নিতে না পেরে চিরকুট লিখে চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান শিক্ষক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার একটি স্কুলের ক্লাসরুম থেকে হারাধন মণ্ডল নামে এক প্রধান শিক্ষকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁকুড়ার রাজাকাটা মাঝেরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাঁকুড়ার রানিবাঁধ বিধানসভার ২০৬ নম্বর বুথে বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-এর দায়িত্বে ছিলেন। ওই বুথের কিছু ভোটারের শুনানিতে ডাক পড়ে। সেই ভোটারদের নথিপত্র জোগাড়ের কথা বলে রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন তিনি। পরে পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজে স্কুলে গিয়ে দেখেন একটি ক্লাসরুমে সিলিং ফ্যানে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার দেহ ঝুলছে।
এতে আরও বলা হয়, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় একটি সুইসাইড নোট। তাতে লেখা, আমি আর চাপ নিতে পারছি না। বিদায়।এই বিএলও কাজের জন্য আমিই দায়ী। এর সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। ভুল আমার।
নোটে তিনি দাবি করেছেন, তার ছেলেকে তিনি কোনও কাজ করতে দেননি। সব কাজ নিজেই করেছেন। নোটে হারাধন আরও লেখেন, ‘আমি কাউকেই বিশ্বাস করি নাই। সব ঠিক করেও ভুল করলাম। ক্ষমা কর আমাকে।
পরিবারের দাবি, ,এসআইআরের কাজের চাপ নিতে না পেরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন হারাধন। তার জেরেই এমন ঘটনা।
নিহতের ছেলে সোহম মণ্ডল বলেন, ‘বাবার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ছিল। তা সত্ত্বেও রাত ৩-৪টা পর্যন্ত এসআইআরের কাজ করতেন। তার পরেও বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ ছিল। বাবা এই মানসিক চাপ নিতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছেন।
মৃতের স্ত্রী মালা মণ্ডলের দাবি, অসুস্থতার জন্য আমার স্বামীকে রাত ৯টার মধ্যে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়তে হত। কিন্তু এসআইআরের কাজের জন্য তাকে রাতের পর রাত জাগতে হয়েছে। তার পরেও যাতে কোনোরকম ত্রুটি না হয় সেই চেষ্টা করতেন। কিন্তু কোনও তরফেই কোনও সহযোগিতা পাননি। অবসাদে তাকে আজ এই পথ বেছে নিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন। তার দাবি, কমিশন অপরিকল্পিত ভাবে এসআইআরের কাজ করেছে। এসআইআর একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া হতে পারত, কিন্তু কমিশন তা জটিল করে তুলেছে।
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক মঙ্গল পান্ডে বলেন, বিহারে এসআইআরের কাজ হয়েছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক বিএলও-রা স্বচ্ছতার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করেছেন। কিন্তু এখানে মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকে এসআইএরের বিরোধিতা করে আসছেন। স্বাভাবিক ভাবে এখানের প্রশাসন ও তৃণমূল নেতৃত্ব বিএলও-দের ভুল কাজ করতে ক্রমাগত চাপে রাখছে। আর তার জেরেই এ ভাবে বেশ কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এর সমস্ত দায় রাজ্য সরকার এবং শাসক দল তৃণমূলের।