ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ গণ্য করে আলজেরিয়ায় আইন পাশ
ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ হিসেবে ঘোষণা করে নতুন আইন পাশ করেছে আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার পার্লামেন্ট। ফরাসি ঔপনিবেশিক অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে দেশটি।
আলজেরিয়ার পার্লামেন্ট সর্বসম্মতক্রমে একটি আইন পাস করেছে, যেখানে দেশটিতে ফ্রান্সের উপনিবেশ স্থাপনকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) জাতীয় রঙের স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে আইনপ্রণেতারা সংসদ কক্ষে দাঁড়িয়ে ‘আলজেরিয়া দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগান দিতে দিতে বিলটি অনুমোদন করেন।
এই আইনের মাধ্যমে পার্লামেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারিসের ক্ষমা প্রার্থনা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে—যা বিষয়টিকে আড়াল করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আইনটি আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক অতীত ও তার ফলে সৃষ্ট ট্র্যাজেডির জন্য ফ্রান্সের ওপর ‘লিগ্যাল রেসপন্সিবিলিটিজ’ আরোপ করেছে এবং ঐতিহাসিক জবাবদিহিকে রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর কেন্দ্রে স্থান দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আইন আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর করার মতো কোনো আইনি শক্তি বহন করে না; তবে এর রাজনৈতিক প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ঔপনিবেশিক স্মৃতি ইস্যুতে আলজেরিয়ার ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভাঙন নির্দেশ করে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এপিএসের বরাতে পার্লামেন্ট স্পিকার ইব্রাহিম বুগালি বলেন, এই আইন ভিতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—আলজেরিয়ার জাতীয় স্মৃতি মুছে ফেলা যায় না এবং তা আলোচনার বিষয়ও নয়।
আইনের মধ্যে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিভিন্ন অপরাধের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক পরীক্ষা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ‘শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন’ এবং ‘সম্পদের পদ্ধতিগত লুটপাট’।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফরাসি উপনিবেশবাদের কারণে সৃষ্ট সব ধরনের ভৌত ও নৈতিক ক্ষতির জন্য পূর্ণ ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আলজেরিয়ান রাষ্ট্র ও জনগণের অখণ্ড অধিকার।’
ফ্রান্স ১৮৩০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আলজেরিয়ায় নির্মম শাসন চালায়, যা নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম, গণহত্যা, অর্থনৈতিক শোষণ, ব্যাপক হত্যাকাণ্ড এবং দেশটির আদিবাসী মুসলিম জনগোষ্ঠীর গণহারে নির্বাসন ও প্রান্তিককরণের মাধ্যমে চিহ্নিত ছিল।
১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ একাই গভীর ক্ষত রেখে গেছে। আলজেরিয়ার হিসাবে এই যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ১৫ লাখ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আগে আলজেরিয়ার উপনিবেশ স্থাপনকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে ধারাবাহিকভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ২০২৩ সালেও তিনি সেই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘ক্ষমা চাওয়া আমার কাজ নয়।’
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা