আকাশসীমা বন্ধ ও স্থল অভিযানের ঘোষণা ট্রাম্পের, সংকটে ভেনিজুয়েলা?
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এরই মধ্যে ভেনিজুয়েলার আকাশসীমা ‘সম্পূর্ণ’ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সামাজিক মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন সরকারের এ চাপের মুখে ভেনেজুয়েলা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) ট্রাম্পের হুমকির পর দেশটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর “ঔপনিবেশিক হুমকি” এবং তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
এক বিবৃতিতে ভেনেজুয়েলার সরকার জানায়, ট্রাম্পের বক্তব্য “ঔপনিবেশিক ধরনের হুমকি”, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা নিজেদের আকাশসীমার প্রতি পূর্ণ সম্মান দাবি করে এবং কোনো বিদেশি নির্দেশ বা হুমকি মেনে নেবে না বলে স্পষ্ট করে।
আকাশসীমা বন্ধের ব্যাপারে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে লিখেছিলেন, “সব এয়ারলাইন, পাইলট, মাদক চোরাচালানকারী এবং মানব পাচারকারীদের উদ্দেশে বলছি—ভেনেজুয়েলার উপরের ও আশপাশের আকাশসীমা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ বিবেচনা করুন।”
ট্রাম্পের এই নির্দেশনার পর সমস্ত অভিবাসী প্রত্যাবাসন ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে, বলে ভেনেজুয়েলার পক্ষ থেকে জানানো হয়। ব্যাপক প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মধ্যে এসব ফ্লাইট ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনার বিষয়। যদিও মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অভিযুক্ত মাদকবাহী নৌকাগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা কয়েক মাস ধরে চলছে। একইসঙ্গে ওই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় সিআইএ’র গোপন অভিযানও অনুমোদন করেছেন।
গত ২৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) মার্কিন সেনাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে খুব শিগগির ‘স্থলপথে’ অভিযান চালানো হবে বলে মন্তব্য করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ভেনিজুয়েলার দাবি, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে তথাকথিত এই মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) প্রধান এয়ারলাইনগুলোকে সতর্ক করে বলেছিল, ভেনেজুয়েলার ওপর দিয়ে উড়তে গেলে “সম্ভাব্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি” তৈরি হতে পারে, কারণ দেশটিতে “নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ও সামরিক তৎপরতা বেড়ে গেছে”।
এফএএ সতর্কতা দেওয়ার পর ভেনেজুয়েলা ছয়টি বড় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনের পরিচালন অধিকার বাতিল করে, যারা পূর্বেই দেশটিতে ফ্লাইট স্থগিত করেছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে—যা মাদুরো অস্বীকার করেছেন।
২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মাদুরো বলেছেন, ট্রাম্প তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান এবং কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ হলে ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা ও সামরিক বাহিনী প্রতিরোধ করবে।
এলাকায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনী এখন পর্যন্ত মূলত মাদকবিরোধী অভিযানেই নজর দিয়েছে, যদিও তাদের সমাবেশকৃত সামরিক শক্তি সেই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি।
সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরে অভিযোগকৃত মাদকবাহী নৌযানের ওপর কমপক্ষে ২১টি হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে কমপক্ষে ৮৩ জন নিহত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও অন্যান্য।