১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫০

জাপানে ৬.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি

জাপানে ভূমিকম্পের পর ভেঙে পড়া গেট  © এএফপি

জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের পরই সুনামি সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর—জাপান মেটিওরোলজিক্যাল এজেন্সি (জেএমএ)। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৪ মিনিটে (গ্রিনিচ মান সময় ০২:৪৪) আওমোরি প্রিফেকচারের উপকূলের কাছে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।

জেএমএ জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সমুদ্রের ২০ কিলোমিটার গভীরে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দফতর (ইউএসজিএস) একই মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে।

জাপানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর ওই অঞ্চলের কোনো পারমাণবিক স্থাপনায় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

দেশটির জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে জানায়, শুক্রবারের ভূমিকম্পের কম্পনের মাত্রা সোমবারের ৭.৫ মাত্রার বৃহত্তর ভূমিকম্পের তুলনায় কম ছিল। সোমবারের কম্পনে সড়ক ধ্বংস, ভবনের কাচ ভেঙে যাওয়া এবং সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার উঁচু সুনামি ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়।

সোমবারের ভূমিকম্পে অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার পর জেএমএ বিরল ধরনের বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করে। হোক্কাইডো থেকে টোকিও’র পূর্বদিকে চিবা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় বসবাসকারীদের এক সপ্তাহের মধ্যে আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনার বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখনো তাড়া করে বেড়ায় ২০১১ সালের ভয়াবহ ৯.০ মাত্রার সমুদ্রতল ভূমিকম্পের স্মৃতি, যা সুনামি সৃষ্টি করে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটিয়েছিল।

২০২৪ সালে জেএমএ প্রথম বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করে জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের দক্ষিণাঞ্চলে, নানকাই ট্রাফ এলাকায় সম্ভাব্য ‘মেগাকোয়েক’ বা অতিবৃহৎ ভূমিকম্পের ঝুঁকি সম্পর্কে।

সরকার সতর্ক করে জানিয়েছে, নানকাই ট্রাফে বড় ভূমিকম্প এবং পরবর্তী সুনামিতে প্রায় ২ লাখ ৯৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ পৌঁছাতে পারে ২ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।

এ অবস্থায় ‘মেগাকোয়েক’ আতঙ্কে জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাসিন্দারা দুর্ঘটনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করছেন। এনএইচকে জানায়, টর্চ, পানির ট্যাংক, আসবাবপত্র নাড়াচাড়া রোধে সাপোর্ট পোল—এসব পণ্যের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে।

হোক্কাইডোর হাকোদাতে শহরের একটি দোকান জানিয়েছে, সোমবারের ভূমিকম্পের পর বোতলজাত পানি ও দুর্যোগ মোকাবিলা কিটের বিক্রি তিন গুণ বেড়েছে।

এক ক্রেতা, যিনি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দোকানে এসেছিলেন, এনএইচকেকে বলেন, “আমরা প্রস্তুতি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই সবার জন্য দুর্যোগ কিট কিনলাম।”

জাপান চারটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত প্রশান্ত মহাসাগরের “রিং অব ফায়ার”-এর পশ্চিম প্রান্তে। ফলে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটি। [সূত্র: আলজাজিরা]