২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৩

সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে নভেম্বরে  © বিবিসি বাংলা

কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত বিধি নিষেধ থাকায় উখিয়ার ইনানী বীচ থেকে এসব জাহাজ সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ নেই। সোমবার (২৭ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নীতিগত সম্মতি দিয়ে পাঠানো চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাসসের খবরে বলা হয়েছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে পাঁচ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‌পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের গত ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছে। ইসিএ এলাকায় কক্সবাজার পৌরসভা (রাজস্ব বিভাগের রেকর্ড করা সমুদ্র সৈকত/বালুচর/খাড়ি/বন/জলাভূমি) এবং ইনানী মৌজা ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ অন্তর্ভূক্ত বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ৫(৪) ধারা মোতাবেক ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন বলিয়া ঘোষিত এলাকায় কোন ক্ষতিকর কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু রাখা বা শুরু করা যাইবে না।’ 

প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৬ এর বিধি১৮(ক) অনুযায়ী ‘যে সকল ক্ষতিকর কাজ (কর্ম) বা প্রক্রিয়া চালু রাখা বা শুরু করা যাইবে না উহা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রাকৃতিক অবস্থা ও জীববৈচিত্র্য, বণ্যপ্রাণীর আবাসস্থলসহ সংরক্ষিত বন ও রক্ষিত এলাকা, নদ-নদী, খাল-বিল, প্লাবনভূমি, হাওর-বাওড়, লেক, জলাভূমি,পাখির অঅবাসস্থল, মৎস্য অভয়াশ্রমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদের জলজ অভয়াশ্রম, জলাভূমির বন, ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় এলাকার অবক্ষয়’-এর বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য।

চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আগের নিয়মেই কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকার গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত ১২টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (১৯৯৫ সনের ১ নম্বর আইন) এর ধারা ১৩-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রণীত সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩-এর আলোকে সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নির্দেশনাসমূহ জারি করল:

১. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতীত সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌযান চলাচলের অনুমতি প্রদান করতে পারবে না।

২. বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন গমনের টিকিট ক্রয় করতে হবে। টিকিটের ওপর Travel pass এবং QR code বসানো থাকবে। QR code বিহীন টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

৩. নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক দিনের বেলায় যাবে এবং দিনেই ফিরে আসবে, রাত্রিযাপন করতে পারবে না।

৪. ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপন করতে পারবে।

৫. পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২০০০ (দুই হাজার) এর অধিক হবে না।

৬. ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকবে।

৭. সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাতে সমুদ্র সৈকত এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি এবং বার-বি কিউ পার্টি করা যাবে না।

৮. কেয়া বনে প্রবেশ এবং কেয়া ফল সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।

আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ শুরু নভেম্বরে, এগিয়ে এলো রাত্রিযাপনের সময়

৯. কোনোভাবেই দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের (সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, তারা মাছ, রাজকাঁকড়া, সামুদ্রিক ঘাস, সামুদ্রিক শৈবাল ইত্যাদি) ক্ষতি সাধন করা যাবে না।

১০. সমুদ্র সৈকতে মোটরসাইকেল, সী-বাইক এবং এরূপ অন্যান্য যানবাহন চালানো যাবে না।

১১. নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন বহন করা যাবে না; একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন: চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের চামচ, প্লাস্টিকের স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ মিলি বা ১০০০ মিলি প্লাস্টিকের পানির বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হলো।

১২. প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে পর্যটকগণকে নিজ নিজ পানির ফ্লাস্ক সাথে রাখতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।