০১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৫

ঢাকায় একের পর এক বজ্রপাত, যা বলছে আবহাওয়া অফিস

ঢাকায় একের পর এক বজ্রপাত  © সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় একদিকে টানা মুষলধারে বৃষ্টি, অন্যদিকে একের পর এক বজ্রপাত ও বিদ্যুতের ঝলকানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির সঙ্গে রাতভর বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভাঙে রাজধানীবাসীর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৬ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই সময়ে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৩ মিলিমিটারে।

মঙ্গলবার রাতেই রাজধানীর আকাশে একের পর এক বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। বজ্রসহ গর্জন ও বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয় পুরো শহর। আবহাওয়ার এমন অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অনেক বাসিন্দা। আজ বুধবার সকালেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কিছুটা কমেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবরুন নেছা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ওয়েদার হিসেবে ১ তারিখ থেকে পোস্ট মনসুন (Post Monsoon) হিসেব করি। আর পোস্ট মনসুন হচ্ছে বজ্রপাত ও বৃষ্টিপাত প্রবণ সময়। এ সময় বজ্রপাত সাধরণত একটু বেশি হয় অন্য সময়ের তুলনায়। তিনি আরও বলেন, অক্টোবর মাসে তুলনামূলক বজ্রপাত একটু বেশি হয়।

আরও পড়ুন: বৃষ্টি কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

বৃষ্টিপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত চলবে। এরপর বৃষ্টির প্রবণতা কমে যেতে পারে এবং গরমের অনুভূতি বাড়তে পারে।’

তিনি আরও জানান, বঙ্গোপসাগরে আজ একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঢাকায় বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে, এবং এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে বর্তমান সময়ে ঘনঘন বজ্রপাত হচ্ছে এবং এর তীব্রতাও বেড়ে গেছে।

ড. হোসেন আরও উল্লেখ করেন, বজ্রপাত বৃদ্ধি পেতে পারে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে। ঢাকার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এই শহরে আগে যেসব বড় বড় গাছ ছিল, সেগুলো সাধারণত বজ্রপাত কমাত। কিন্তু বর্তমানে সেসব গাছ প্রায় নেই। এ কারণেই বিগত ১০ বছরের মধ্যে বজ্রপাতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

বজ্রপাত থেকে নিরাপদে থাকার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এ আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন, বজ্রপাতের জন্য বাড়ীতে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও .যখনই বজ্রঝড় শুরু হবে তখন বাইরে অবস্থান করা যাবে না। বজ্রঝড় সচরাচর ৩০-৪৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হয়। এই সময়টিতে আপনি ঘরে থাকতে পারলেই ভালো। আর যদি ঘরের বাইরেও থাকে তাহলে অবশ্যই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।

এছাড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ৪৪ মিলিমিটার থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিকে ‘ভারী বৃষ্টি’ হিসেবে ধরা হয়।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবীর বলেন, ‌‘দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত কমবেশি অব্যাহত থাকতে পারে।’