ক্রিয়েটিভ আইটি ক্যারিয়ার ফেস্ট: চাকরি, নেটওয়ার্কিং ও অনুপ্রেরণার মিলনমেলা

৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫০ PM , আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮ AM
সরাসরি চাকরির সুযোগ একসঙ্গে থাকায় এ আয়োজনকে আয়োজকেরা দেশের অন্যতম সেরা ক্যারিয়ার ইভেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন

সরাসরি চাকরির সুযোগ একসঙ্গে থাকায় এ আয়োজনকে আয়োজকেরা দেশের অন্যতম সেরা ক্যারিয়ার ইভেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন © সংগৃহীত

ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট সফলভাবে আয়োজন করেছে ‘ক্রিয়েটিভ আইটি ক্যারিয়ার ফেস্ট ২০২৫’। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ২৩ ও ২৪ আগস্ট দুই দিনব্যাপী এই মেগা ইভেন্টটি ছিল দেশের টেক, আইটি ও ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির একটি মিলনমেলা। দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি, টেক জায়ান্ট এক ছাদের নিচে একত্র হয়ে তরুণদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন দিয়েছে। বিশেষ সেশন, নেটওয়ার্কিং এবং সরাসরি চাকরির সুযোগ একসঙ্গে থাকায় এ আয়োজনকে আয়োজকেরা দেশের অন্যতম সেরা ক্যারিয়ার ইভেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

ক্রিয়েটিভ বিজনেস গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান মনির হোসেন, প্রধান অতিথি হিসেবে ক্যারিয়ার ফেস্ট উদ্বোধন করেন। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই শুরু হয় এই বিশেষ আয়োজনের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণরাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই ফেস্ট শুধু চাকরির সুযোগই তৈরি করেনি, বরং তাদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভবিষ্যতের পথে হাঁটার সাহস জুগিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই তরুণরাই আগামী দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।’

গ্রুপের সিওও জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট মানে শুধু চাকরি  নয়, বরং এটা হলো অ্যাকাডেমিক নলেজ আর ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটা শক্তিশালী সেতুবন্ধন। এই ইভেন্ট দেখিয়েছে, কীভাবে সঠিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শেখা বিষয়টিকে সত্যিকারের সুযোগে রূপান্তর করা যায়।

আন্তর্জাতিক ভিশন তুলে ধরে চিফ গ্লোবাল অফিসার শম্পা পারভীন বলেন, ‘বিশ্বে কাজের ধারা দ্রুত বদলাচ্ছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের তরুণদের এমনভাবে তৈরি করা, যেন তারা গ্লোবালি কম্পিটিটিভ হতে পারে। তাদের কাছে যেন ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল থাকে এবং যেকোনো মার্কেট বা যেকোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সাহস ও আত্মবিশ্বাস থাকে।’

এবারের ফেস্টের প্রতিপাদ্য ছিল ‘A Gateway to Tomorrow’s Careers’ যেখানে ২০ জনেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট অংশগ্রহণ করেন এবং শেয়ার করেন তাদের গ্লোবাল এক্সপেরিয়েন্স এবং ফিউচার ইনসাইট। যা তরুণ প্রজন্মের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এবং ডিজিটাল লিডারশিপে সঠিক পথ দেখিয়েছে। বিশেষ করে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি, ডিজিটাল বিজনেস ও ক্রিয়েটিভ নিয়ে আয়োজিত সেশনগুলো  শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

সেশনে, প্রযুক্তি ও গ্লোবাল লিডারশীপের দিকটি গুরুত্ব দিয়ে ফারজানা আফরিন তিশা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও টেক লিড (মাইক্রোসফট বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল) বলেন, ক্লাউড আর এআই বাস্তবতাকে পাল্টে দিচ্ছে,  তবে ক্রমাগত দক্ষতা অর্জনের মধ্যেই আসল শক্তি লুকায়িত আছে।

এ প্রসঙ্গে ইউসুপ ফারুক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর (মাইক্রোসফট বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল) যোগ করেন, সুযোগ পেলে প্রতিভা আরও বিকশিত হয়। তাই ভবিষ্যতে এগিয়ে থাকতে হলে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং নিজেকে পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে হবে।

শাদাব শায়েরি আহমেদ, প্রোডাক্ট ওনার, (অপ্টিমাইজেলি) বলেন, একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব হলো, কোম্পানির ভিশনকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। কাস্টমারের প্রয়োজন আর কোম্পানির লক্ষ্য, দুটোর মধ্যে ব্যালেন্স তৈরি করা। আর সব সময় নিজেকে প্রশ্ন করা—এর মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে?

কেএম হাসান রিপন, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ড্যাফোডিল ফ্যামিলি), মনে করেন, লিডারশিপ, ব্র্যান্ডিং এবং স্ট্র‍্যাটিজি—এই তিনটিকে একসঙ্গে চর্চা করলেই দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য পাওয়া যায়।

ইশমাম চৌধুরী, সিওও (শিখো), তরুণদের আহ্বান জানান, সব সময় কৌতূহলী থাকবেন, এআই দিয়ে আসল সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন, আর এটাকে নিজের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে নেওয়ার একটা টুল হিসেবে ব্যবহার করবেন।

ওমর শরীফ ইবনে হাই, ফাউন্ডার (নেক্সট লিডারস), বলেন, কাস্টমারের প্রতি সম্মান, তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং তাদের কথা মন দিয়ে শোনা—এই তিনটি বিষয় বিজনেসে সাফল্যের মূল মন্ত্র।

মুনাফ মুজিব চৌধুরী, হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন (অ্যাক্সেন্টেক পিএলসি), তরুণদের সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যৎ শুধু বুঝলে হবে না, তা গড়তে হবে। কারণ ভবিষ্যৎ তাদের, যারা তা তৈরি করে, শুধু দেখে না।

মুহিব্বুল মুক্তাদির তানিম, সিনিয়র ম্যানেজার (আইসিসিডিআরবি), বলেন, ডাউনটাইম বড় খরচ ডেকে আনে, তবে সঠিক সাইবারসিকিউরিটি পরিকল্পনা থাকলে ঝুঁকিই প্রবৃদ্ধির সুযোগে রূপ নেয়।

দীপেশ বানিক, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিসার, (ওয়েব ফন্টেইন) উল্লেখ করেন, অনিশ্চয়তা এখন সবসময়ের সঙ্গী, আর এটার সাথে দ্রুত তাল মেলানো, টিকে থাকার একমাত্র উপায়। ডিজিটাল যুগে সফল হতে হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্থাৎ অ্যাজাইল লিডারশিপ থাকাটা আর ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং এটা একটা অপরিহার্য দক্ষতা।

ডেল এইচ খান, ফাউন্ডার (হান্টার সিকিউরিটি সার্ভিসেস), বলেন, এ যুগে শক্তিশালীরা নয়, বরং বুদ্ধিমানরাই বিজয়ী হবে। কারণ ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্র হচ্ছে এআই, রোবটিক্স এবং সাইবার ডিফেন্সের। সেখানে সফল হতে হলে দক্ষতাকে শখ হিসেবে বিবেচনা না করে অপরিহার্য হিসেবে দেখতে হবে।

এমডি আবদুর রউফ, এআই অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ লিড (নগদ), বলেন, ধারাবাহিকভাবে শেখা, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং কাজ করে যাওয়া—এই তিনটিই ভবিষ্যতের সাফল্যের মূলমন্ত্র।

সায়েদ সাদ্দাম হোসেন, ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস্ট (গ্রামীণফোন), বলেন, সৃজনশীলতা মানে ফিচার নয়; আসল কথা হলো ভ্যালু। সময়মতো সঠিক কৌশলের সঙ্গে সৃজনশীলতা যুক্ত করলে সব সময় ভালো ফল আসে।

কিংকর আহসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (Weable Digital), বলেন, পৃথিবী আসলে গল্প দিয়েই তৈরি। যে ভালো গল্প বলতে পারে, সে নিজেই একদিন বড় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। তাদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা ও দূরদর্শী ভাবনা তরুণদের মাঝে এক নতুন উদ্দীপনা তৈরি করে। 

২৪ আগস্ট দ্বিতীয় দিনটি ছিল চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিশেষভাবে সাজানো। এই দিন Bdjobs.com, Betopia Group, BRIDGE Chemie, Plexus Cloud, EDitouchIT, Salmon Developers, Salamat, Ecomclips এবং BINARYcgi-এর মতো ১৪টি  স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে আয়োজনে।

প্রচলিত ক্যারিয়ার ফেয়ারের বাইরে গিয়ে দ্বিতীয় দিনটিও ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। অংশগ্রহণকারীরা পেয়েছেন মক ইন্টারভিউ, সিভি রিভিউ, এবং অন-স্পট নিয়োগের সুযোগ। যা তাদের কর্পোরেট নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত করেছে এবং অনেকেই সঙ্গে সঙ্গেই চাকরির অফারও পেয়েছেন। আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, ফেস্টে ১২০০+ আবেদন জমা পড়ে এবং অনস্পট সাক্ষাৎকার শেষে অনেকেই চাকরির অফার পান। অনেকের জন্য এটি ছিল জীবনের প্রথম করপোরেট ইন্টারভিউ, কারও জন্য ছিল প্রথম চাকরির অফার লেটার পাওয়ার অভিজ্ঞতা। ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সাফল্যের আনন্দ আর নতুন যাত্রার উচ্ছ্বাস। 

এই ফেস্টের সাফল্য আবারও প্রমাণ করে যে, যেখানে দক্ষতা এবং সুযোগ একত্রিত হয়, সেখানেই সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করে তারা পায় নতুন দিকনির্দেশনা, অনুপ্রেরণা এবং বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষমতা।

গিগাবাইট বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায়, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড–এর মিডিয়া সহযোগিতায় এবং মার্কেটডিয়ামের আউটরিচ পার্টনারশিপে আয়োজিত ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার, কারণ এটি কেবল একটি জব ফেয়ারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি দেশের তরুণদের জন্য একটি দিকনির্দেশক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আগামীর প্রযুক্তি ও ডিজিটাল জগতে সফল হতে হলে এই ধরনের প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

দুপুরে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঢাবি উপাচার্যের শোক
  • ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নরেন্দ্র মোদির শোক
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার সাহসী নেতৃত্ব মানুষ…
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
জকসু নির্বাচন আটকে দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি রইস উদ্দিন?
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
গৃহবধূ থেকে যেভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নেতা হয়ে উঠেছি…
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫