রাবিতে বৃষ্টি: স্বস্তির সাথে বাড়ে ভোগান্তি!
‘‘এক পশলা বৃষ্টিতে অথবা কোনো রোদ্দুরে
স্মৃতিগুলো ভিড় করে হৃদয়ের দৃষ্টিতে
কখনো মনে পড়ে কি এমনি দিনে আমাকে....।’’
বৃষ্টি কিংবা রোদ্দুরে কুমার বিশ্বজিৎ-এর এই গানের সুরে সুর মিলিয়ে কেউ প্রিয়জনকে স্বরণ করুক বা না করুক, এক পশলা বৃষ্টি নামলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টিবিলাস হবেই। কেননা বর্ষার বৃষ্টিতে প্রকৃতিক সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি ধারণ করে এক মোহময় রূপ। সৌন্দর্যে মাখামাখি হয়ে যায় চারদিক। ফলে দলবেঁধে বৃষ্টিবিলাসে মেতে উঠে একঝাঁক তরুণ-তরুণী। কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে নগ্ন পায়ে প্যারিস রোডে হাঁটে, কারো দুরন্তপনায় মেতে ওঠে সমগ্র ক্যাম্পাস চত্বর। এ যেন প্রচন্ড গরমের মাঝে একমুঠো স্বস্তির আমেজ। তবে বৃষ্টি শেষে ক্যাম্পাসে হওয়া জলাবদ্ধতা বাড়ায় ভোগান্তি!
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, ঘন্টাখানেক বৃষ্টি হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনের রাস্তা, বিনোদপুর ও কাজলা গেট, এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের গেটসহ সামনের রাস্তা, পরিবহন মার্কেট ও ভবনের সামনের রাস্তা, মমতাজউদ্দিন কলাভবনের গেট, মন্নুজান হলের সামনের রাস্তা, খালেদা জিয়া হল থেকে দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের পুরো রাস্তা, শহীদ হবীবুর রহমান হলের সামনের রাস্তা, শাহ মখদুম হল ও লতিফ হল সংলগ্ন রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় হাঁটু ভর্তি পানি জমে। ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান এসব রাস্তায় পানি জমায় যাতায়াতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: ঢাকায় পড়তে এসে ধর্ষণের শিকার, কোলকাতায় পালিয়ে গেলেন মেডিকেল ছাত্রী
ক্যাম্পাস ঘুরে আরো দেখা গেছে, এসব জায়গায় জলাবদ্ধতার মূল কারণ প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা। তৃতীয় বিজ্ঞান ভবন থেকে চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের পূর্বপাশে এবং সামনের ড্রেন সরু হয়ে পড়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে পানি নিষ্কাশন ঠিকমত হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টি হলেই হচ্ছে জলাবদ্ধতা। একইভাবে মন্নুজান হল, হবিবুর রহমান হল, মমতাজউদ্দিন কলাভবনের সামনের রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহৎ তিনটি কনস্ট্রাকশনের কাজ চালু থাকায় বেশ কিছু রাস্তার সংস্কার কাজ আটকে রয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই বাড়ছে এমন ভোগান্তি। হাঁটুভর্তি পানি জমায় বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন নারী শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নবনীতা রায় বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে হাটু পর্যন্ত পানি জমে থাকে। ফলে যাতায়াত বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। অনেক সময় বাধ্য হয়েই কাপড় ভিজিয়েই ক্লাসে কিংবা হলে ঢুকতে হয়। যা খুবই বিব্রতকর বলে জানান এ শিক্ষার্থী।
ভোগান্তির কথা জানিয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মহিমা ইসলাম হিমি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলের সামনের রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। অধিকাংশ ভাঙ্গা এ রাস্তায় বৃষ্টি হলেই বাড়ে জলাবদ্ধতা এবং কাঁদায় হাঠার অবস্থা থাকে না। ফলে চলাচলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এছাড়া ক্যাম্পাসে এসব জলাবদ্ধতা রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাস্তাগুলো সংস্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার রহমান বলেন, ক্যম্পাসের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ সমস্যা সমাধানে একটু বড় বাজেট প্রয়োজন। কেননা এ জলাবদ্ধতার পিছনে কেবল ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংকুলান শুধু জড়িত না, এখানে সংস্কার কাজেরও প্রয়োজন আছে। কেননা ক্যাম্পাসের অনেক জায়গা নিচু হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টি হলেই সেগুলো ঢুবে যাচ্ছে। অনেক সময় বাহিরের পানি ভিতরে আসতেছে। এখন এসব জায়গায় মাটি ভরাট এবং কিছু রাস্তার সংস্কার করা প্রয়োজন। তাই একটি বড় বাজেট ছাড়া এটি করা সম্ভব নয় বলে জানান এ পরিচালক।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসের জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমরা অবগত আছি। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলছে। ফলে অনেক লাইন বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে। তাছাড়া ক্যাম্পাসের অনেক জায়গা নিচু আছে, সেগুলো ভরাটের পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পলিথিন কিংবা ময়লা আবর্জনা ফেলার ফলে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এবিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান উপ-উপাচার্য।