ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান: ‘কয়দিন পর যদি নাম শুনেই সিডিউসড হয়ে যান’
মেয়েদের পোশাকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কর্মসূচি নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে এবার পোশাকের বৈচিত্রকে স্বাগত জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
এই কর্মসূচিতে প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ছিল ‘সংস্কৃতি কারও বাপের না’, ‘শান্তিপূর্ণ দাসত্বের উপরে প্রশ্নবিদ্ধ স্বাধীনতা বেঁচে নিলাম’, ‘কয়দিন পর যদি নাম শুনেই সিডিউসড হয়ে যান’, ‘সিডিউসড হোন বা না হোন হামলে পরবেন না’, ‘আমি বলি না নিপাত যাক, বলি সব থাক থাক’ ইত্যাদি। এতে বেসরকারি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুলেরও কয়েকজন শিক্ষার্থীও অংশ নেন। তারা যার যেমন খুশি তেমন পোশাক পরে আসেন। আয়োজনের নামও দেয়া হয়েছে ‘যেমন খুশি তেমন পরো’।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্য এর পাদদেশে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
আয়োজকরা বলছেন, বৈচিত্র্যময় এবং অযাচিত খবরদারিহীন বাংলাদেশের প্রতিরূপ তুলে ধরতেই তাদের এই আয়োজন।
এতে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা শারমিন বলেন, ‘যারা পোশাকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে রাজু ভাস্কর্যে দাড়িয়েছিল, তারা বলেছে স্বাধীনতার নামে আমরা যারা ইচ্ছেমতো পোশাক পরতে চাই, আমাদের যেন আইনের আওতায় আনা হয়।
‘কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান বাঙালি নারী হিসেবে আমাকে আমার কাছে যেটা শালীন মনে হয় সেটা পরার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু যারা এখানে দাঁড়িয়েছিল এবং পরে তাদের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়েছিল তারাই সংবিধানবিরোধী কথা বলছে। তারা আমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। তাদেরই আইনের আওতায় আনা উচিত।’
আরও পড়ুনঃ ‘ছোট পোশাক নারীকে বিজ্ঞানী বানায় না, পণ্য বানায়’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরুণিমা তাহসীন বলেন, ‘শাড়ি, লুঙ্গি, পাজামা-পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ, স্কার্ট, ওয়েস্টার্ন, বোরকা, থামিসহ সকল আদিবাসী পোশাক আমাদের পোশাক। নিজের চোখে যে পোশাক মানানসই, তার ব্যতিক্রম অন্যের পোশাকে দেখলে আক্রমণের যে প্রবণতা শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘নিজের পছন্দকেই দেশীয় মূল্যবোধ এর সর্বোচ্চ স্ট্যান্ডার্ড ধরা, আর এদেশেরই আরেকজন স্বাধীন নাগরিকের পছন্দকে খারিজ করে দেয়ার যে নাৎসিবাদী প্রবণতা, তার বিরুদ্ধেই আমাদের আজকের আয়োজন।’
লিখিত বক্তব্যে আয়োজকরা বলেন, ‘যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু বর্তমান শিক্ষার্থীকে পোশাকের স্বাধীনতা তথা জীবনযাপনের স্বাধীনতার উপর আক্রমণকে সাধুবাদ জানাতে দেখা লজ্জার বিষয়।’
তারা আরও বলেন, ‘মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি সদা পরিবর্তনশীল। অন্যের স্বাধীনতার উপর খবরদারি না করে, নিজের স্বাধীনতা চর্চার মাধ্যমে সমাজে যে পরিবর্তন আসে, তার পক্ষে আমাদের অবস্থান। ব্যক্তি স্বাধীনতার অভিব্যক্তি যতো শক্তিশালী হচ্ছে, সমাজ তত বৈচিত্র্যময় হচ্ছে। এই বৈচিত্র্যে যেমন রয়েছে ধর্মীয় পোশাক, ঠিক ততোটাই রয়েছে তথাকথিত পাশ্চাত্য পোশাক।’
একটির বিরুদ্ধে অন্যটিকে ব্যবহার করা এবং তার মাধ্যমে এদেশের একজন স্বাধীন নাগরিককে হেনস্তা করা এবং তার ফলাফলে স্বাধীনতার উল্টো ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ তৈরি করা, এই পুরো প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দাও জানান আয়োজকরা। বলেন, ‘এর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আমরা পোশাকের বৈচিত্র্যতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে চাই।’
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের তাসনিম হালিম মিম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রাফিয়া তামান্না, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ওয়াসিমা ফারজানা, সাইমা লুবনা এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ফাইজা ফাইরুজও অংশ নেন।