মুহসীন হলে মারধর, ছাত্রলীগকর্মী বললেন ‘প্যারা নাই, দেখতেছি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের খেলা দেখতে গিয়ে গেস্টরুমে দেরি করে আসায় ১ম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই হলের ছাত্রলীগকর্মী ৩ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে হলের টিনশেডের ১০২৭নং রুমে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, পপুলেশন সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম পাপ্পু, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী মো. মারুফ আহমেদ ও আইন বিভাগের নাহিয়ান নাবিল। তারা সবাই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী এবং মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের অনুসারী। আর হোসেন কেন্দ্রী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের রাজনীতি করেন।
অভিযুক্ত আশরাফুলকে এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘প্যারা নাই। দেখতেছি ব্যাপারটা। এ রকম কিছু ঘটেনি। সমস্যা নাই। দেখতেছি।’
মারুফ বলেন, ‘এ রকম কিছু ঘটেনি। হালকা বকাঝকা করা হয়েছে। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।’
ভুক্তভোগীরা হলেন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ ও মোহাম্মদ ফিরোজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মো. নাঈম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মো. রিসালাত, ফিন্যান্স বিভাগের সারোয়ার জাহান শান্ত, অর্থনীতি বিভাগের মুঈনুদ্দিন চিশতীয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গেস্টরুমে উপস্থিত একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘সোহাগ গেস্টরমে খেলার স্কোর দেখার জন্য ফোনের স্ক্রিন অন করেছিলেন। সেটা দেখে তাকে মারধর করেন মারুফ। নাঈম গেস্টরুমে না এসে টিভি রুমে খেলা দেখছিলেন। পরে তাকে এনে মারধর করেন মারুফ ও আশরাফ। এ সময় আশরাফুল জুতা এবং পাশে থাকা বোতল ছুঁড়ে মারেন। এ ছাড়া ফিরোজের গলা টিপে ধরেন তারা। এ সময় রিসালাত, শান্ত, মুঈনকে গালাগালি করেন।’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘এর আগেও রুমে তালা দিয়ে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঘুমাতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তারা গোপনে তালা খুলে রুমে ঢুকে ঘুমানোর কারণে রাত দুইটার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগের কর্মী আশরাফুল, মারুফ ও ইংরেজি ফর স্পিকার অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের আরাফাত হোসেন মাহিন দুইটার দিকে এসে তাদের মারধর করেন।’
মঙ্গলবার রাতে ঘটে যাওয়া বিষয়ে ভুক্তভোগী কেউ ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে হল প্রশাসন বরাবর কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘অভিযোগ দিয়ে কী হবে? হল প্রশাসন তো নামমাত্র। হল চালায় ছাত্রলীগ। ওদেরকে অভিযোগ দিলেও যা, না দিলেও তা। তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না।’
ভুক্তভোগী নাঈম মারধরের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে কেউ মারেনি। এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আপনি অন্য মাধ্যমে তথ্য নিতে পারেন। আমি বলতে পারব না।’
তবে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন ঘটনা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি তাদের মধ্যে মিউচুয়াল করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, আমরা খেয়াল রাখব।’
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তো আমাদেরকে জানাতে হবে। আমাদের কাছে কেউ মৌখিক বা লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে গত ২৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ফেসবুকে মজা করে পোস্ট দেওয়ায় মুহসীন হলে ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী সাকিব মিয়াকে ডেকে গালমন্দ ও সিট পরিবর্তন করে টিনশেডে পাঠান হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদুল হক শিশিরের গ্রুপের কর্মীরা। পরে তিনি হল ছেড়ে চলে যান।