২৮ আগস্ট ২০২২, ২০:৫১

‘চুলের স্টাইল পুরুষকে বিজ্ঞানী বানায় না, পণ্য বানায়’

জাবিতে মানববন্ধন  © সংগৃহীত

‘চুলের স্টাইল পুরুষকে বিজ্ঞানী বানায় না, পণ্য বানায়’, ‘খালি গায়ে থেকে বিপরীত লিঙ্গকে সিডিউস করা বন্ধ করুন’ এমনি কিছু প্লাকার্ড হাতে নিয়ে পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন কিছু শিক্ষার্থী, তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাঁড়ালেন পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে। নারীর নিজস্ব ইচ্ছায় পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করলেন তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে ভাস্কর্যের পাদদেশে রবিবার বিকেলে এ কর্মসূচিতে নারী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পুরুষ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।

বিভিন্ন ফেস্টুন নিয়ে আয়োজিত অসাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এ মানববন্ধনে সাম্প্রতিক সময়ে পোশাকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়। আয়োজকদের একজন ইয়াসের সামিন ফেসবুকে এই মানববন্ধনের কিছু ছবি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করেন। তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

এই আয়োজনের বিষয়ে জানতে আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, রাতে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে কর্মসূচির বিষয়ে জানাবেন।

এর আগে সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে আরেক দল শিক্ষার্থী নারীর পোশাকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে মানববন্ধন করেছেন। কর্মসূচিতে দাবি করা হয়, যে মেয়েরা পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরে, তারা মানসিকভাবে ধর্ষণ করে।

বাংলা বিভাগের ৪৮তম আবর্তনের শাহরিয়ার ইমন বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে মানুষকে সিডিউস বা যৌনতায় প্ররোচিত করে এমন পোশাক পরা অন্যায়। কাউকে যৌনতায় উদ্বুদ্ধ করতে অবশ্যই তার সম্মতি নেয়া বাধ্যতামূলক। কারও সম্মতি ব্যতিরেকে তাকে যৌন প্রলুব্ধ বা প্ররোচিত করা এক ধরনের মানসিক ধর্ষণ।'

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম আবর্তনের মশিউর রহমান বলেন, “অশালীন পোশাকের কথা উঠলে অনেকে বলে, ‘আমার শরীর আমার পছন্দ’। কিন্তু এ বক্তব্য যতটুকু সত্য, তার থেকে বড় সত্য হচ্ছে, একজনকে বিরক্ত করার অধিকার আরেকজনের নেই। সুতরাং পাবলিক প্লেসে কোনো পোশাক নুইসেন্স বা বিরক্তি তৈরি করছে কি না তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।”

 উল্লেখ্য, স্লিভলেস টপ পরা এক তরুণীকে নরসিংদী রেলস্টেশনে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মার্জিয়া আক্তার শিলাকে জামিন দেয়ার সময় হাইকোর্টে এক বিচারকের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৬ আগস্ট মার্জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেয়।

মার্জিয়ার আইনজীবী মো. কামাল হোসেনের বরাতে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শুনানির সময় আদালত দেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে তরুণীর পোশাক সংগতিপূর্ণ কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে। ওই তরুণী যে পোশাক পরেছিলেন, সেটি দেশের সবচেয়ে ‘ফাস্ট এরিয়া’ গুলশান-বনানীতেও কোনো মেয়ে পরে রাস্তায় বের হন না।

গণমাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তুমুল সমালোচনা হয়। আর ১৭ আগস্ট মার্জিয়ার আইনজীবী কামাল হোসেন ফেসবুকে সমালোচনার বিষয়টি হাইকোর্টের একই বেঞ্চের নজরে এনে সমালোচনাকারীদের শাস্তি দাবি করেন।

আদালত ফেসবুকে মন্তব্যকারীদের বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে স্ক্রিনশট জমা দিতে বলেছে।