২৫ আগস্ট ২০২২, ১৫:১৪

‘ছোট পোশাক নারীকে বিজ্ঞানী বানায় না, পণ্য বানায়’

মানববন্ধন   © সংগৃহীত

নরসিংদীর রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তা প্রসঙ্গে উচ্চ আদালতের বক্তব্যে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধন কর্মসূচি করেন তারা। সেইসঙ্গে উচ্চ আদালতকে অভিবাদন ও স্যালুট জানান শিক্ষার্থীরা। 

এ সময় ঢাবি শিক্ষার্থীরা ‘ছোট পোশাক নারীকে বিজ্ঞানী বানায় না, পণ্য বানায়’, ‘দেশীয় মূল্যবোধ বিরোধী সংস্কৃতি গ্রহণযোগ্য নয়’ প্ল্যাকার্ডে পোশাকের নামে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানিকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেন।  

মানববন্ধনে ঢাবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুহম্মদ রবিউল করিম বলেন, ‘গত ১৬ আগস্ট একটি মামলার পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত পোশাকের স্বাধীনতার নাম দিয়ে যারা পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আদালত প্রশ্ন তুলে বলেছেন, সভ্য দেশে এমন পোশাক পরে রেলস্টেশনে যাওয়া যায় কিনা? কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করার অধিকার আছে। পোশাক সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না? যে সমাজে যাবেন, সে সমাজের আর্থসামাজিক অবস্থাও একটি বিষয়।’

ঢাবির এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘পোশাকের স্বাধীনতার নামে বর্তমানে আমাদের সমাজে যা হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। এ পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতে এত সুন্দর ও গঠনমূলক পর্যবেক্ষণ আমাদের সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।’

দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রেহানা রাহী বলেন, ‘সংস্কৃতি অবশ্যই পরিবর্তনশীল। কিন্তু আমরা যে সংস্কৃতি গ্রহণ করব, সেটা অবশ্যই আমাদের দেশীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আজকাল পোশাকের স্বাধীনতার নামে যে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানি করা হচ্ছে, তা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে। এটা এক ধরনের কালচারাল টেরোরিজম।’

ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, ‘বাক স্বাধীনতার অর্থ যেমন অন্যকে গালি দেওয়া নয়, ঠিক তেমনি পোশাকের স্বাধীনতার অর্থ অন্যকে বিরক্ত করা নয়। পোশাকের স্বাধীনতার নামে এমন পোশাক পরা কখনই ঠিক না, যা পাবলিক নুইসেন্স বা গণ উৎপাত বা বিরক্তি তৈরি করে। পাবলিক নুইসেন্স এক ধরনের ক্রাইম।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাইভেট প্লেস আর পাবলিক প্লেসের ড্রেস কখনো এক না। অনেকে পোশাকের স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানি করে পাবলিক প্লেসে মানুষকে কষ্ট দেয়, এটা অবশ্যই অন্যায়। বাড়িতে সেই স্বাধীনতা পালন করুক, পাবলিক প্লেসে সবার মূল্যবোধ মেনেই তাকে চলতে হবে।’

মানববন্ধনে আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলুল আলম বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে পোশাকের স্বাধীনতার আড়ালে অনেকের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গকে সিডিউস (যৌন প্ররোচিত) করার চেষ্টা দেখা যায়। পাবলিক প্লেসে কাউকে সেক্সুয়ালি সিডিউস করা মানসিক নির্যাতনের শামিল। একজনকে মানসিক নির্যাতনের অধিকার অবশ্যই অন্যজনকে দেওয়া হয়নি।’

মানববন্ধনে আয়েশা জেরিন, মুমতাহিনা শমি, প্রজ্ঞা আহমেদ, উম্মে রুম্মান জেরিন, হেলাল হোসেন, শাকিল আস-সাদ, সায়েম হোসেন, সাকিব খান, সাদিয়া আফরোজ, ইসমত জাহান মিলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন : দুর্বল শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের প্রয়োজন আছে: শিক্ষামন্ত্রী

উল্লেখ্য, গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে রাজধানীর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী গালিগালাজ ও মারধরের শিকার হন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা হলে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন। পরে এ ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলাকে পুলিশ ৩০ মে গ্রেপ্তার করে। এরপর গত মঙ্গলবার শিলার জামিন আবেদন শুনানিতে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে কথা বলেন।