রাবি ছাত্রের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছে তদন্ত কমিটি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মতিহার হলে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সামসুল ইসলামকে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, গলায় ছুরি ঠেকিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে ভুক্তভোগীর শরীরে আঘাতে চিহ্ন পাওয়া গেছে। রবিবার দাপ্তরিকভাবে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তকে চিঠি দিয়ে কমিটির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়েছে। এ দিনই দুই পক্ষকে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে সামসুল ইসলামকে ৩ ঘণ্টা রুমের মধ্যে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রশাসন বরাবর লিখিতও দিয়েছেন সামসুল।
মারধরের ও চাঁদা আদায়ের বিষয়টি প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে জানালে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মতো পরিণতি করারও হুমকি দেন ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতেই তিনজন সহকারী প্রক্টরের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বাযক আরিফুর রহমান বলেন, কমিটি গঠিত হয়েছে শুক্রবার রাতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছি। শনিবার ছুটি থাকায় আজ আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাদী ও বিবাদীকে চিঠি দিয়ে ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এক স্কুলে ছেলে পড়ে, মা-ও পড়ে
তদন্ত প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, উভয়পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হবে। এ ছাড়া মতিহার হলের ওই কক্ষের আশপাশের কোনো কক্ষের শিক্ষার্থীদের ও বাদী পক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্য নেওয়া হবে। বাদী ও বিবাদীর মোবাইলে কথোপকথনে যা পাওয়া যাবে, সেটিও তদন্তে তারা কাজে লাগাবেন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বিশ্লেষণ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
মারধরের আলামত মিলেছে জানিয়ে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে কেউ একজন মেরেছেন, এটি নিশ্চিত। তাঁর শরীরে মারধরের প্রমাণ মিলেছে। আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এখন কে মেরেছেন, এই মারধরের কারণ কী? এইসব ঘটনার সত্যতা খুঁজছি। আশা করছি চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আমরা প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।
প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রশাসন চায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দিতে। এসব ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে চাই।
উল্লেখ্য, শুক্রবার লিখিত অভিযোগে সামসুল বলেন, শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা তাকে ফোন করে হলের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে ভাস্করের সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। ভাস্করের কক্ষে যাওয়ার পর তিনি তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায়ে গলায় ছুরি ধরে ২০ হাজার টাকা কেড়ে নেন। সে সময় আরও ছয় হাজার টাকা দাবি করলে বিষয়টি সামসুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের অবহিত করবেন বলে তাদের জানান। এ কথা শুনে ভাস্করসহ বাকি দুজন রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করেন আমাকে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের ভাস্কর তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আবরারকে দেখেছিস? আবরারের অবস্থা কিন্তু তোরও হবে।’