‘ছাত্রলীগের কথায় হল প্রশাসন আমাকে পুলিশে দিয়েছে’
নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা যেন আর কারো সঙ্গে না ঘটে সে আর্জি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক মেফতাহুল হোসেন আল মারুফ। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। মারুফ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
মেফতাহুল মেফতাহুল মারুফ বলেন, চ্যাট গ্রুপে করা আমার একটি সাধারণ বক্তব্যকে ইস্যু বানিয়ে হল ছাত্রলীগ আমাকে হল প্রশাসনের কাছে নিয়ে যায়। হল প্রভোস্ট কোনো তদন্ত না করে আমাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। আমার বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র, বিভিন্ন এক্টিভিস্টদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মুক্তি পাই। আমার সঙ্গে হওয়া এ অন্যায় যেনো আর কারো সঙ্গে না হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাকে শারীরিক নির্যাতন না করা হলেও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এমন অবিচারের অবসান চাই। এই অবধি যে প্রতিবাদ হয়েছে, সে সিলসিলা যেন সামনের দিনেও বজায় থাকে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র মেফতাহুল মারুফের প্রাইভেট গ্রুপের মেসেজের সূত্র ধরে জঙ্গি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন। সেখানে থেকে ১২ ঘণ্টা পর 'ছাত্র অধিকার পরিষদ ও স্টুডেন্ট এগেনেস্ট টর্চার' এর উদ্যোগে মুচলেকা নিয়ে মারুফকে শাহবাগ থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রবিরোধী কাজের প্রমাণ পায়নি পুলিশ, হলে উঠতে পারবেন সেই ঢাবি ছাত্র?
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তাঁর এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। তাঁর (মারুফ) পরিবারের বড় দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। তবে, ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কোনো দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই।
ওসি আরও বলেন, সে যে মন্তব্য করেছে এটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। তাই আমরা তদন্তের পরে তাঁর থেকে একটি মুচলেকা নিয়ে শিক্ষকদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের হল থেকে প্রাথমিক তদন্ত করে মারুফের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। এরপর প্রক্টরিয়াল টিম থানায় দিয়েছে। কোনো ছাত্রকে সরাসরি আমি থানায় দিতে পারি না, এটা আমাদের সিস্টেমে নেই। সে আমাদের ছাত্র হিসেবে সহযোগিতা করে কথা বলেনি। এজন্য প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আমার কাছে যতটুকু এভিডেন্স ছিল, তার ভিত্তিতেই থানায় দিতে বাধ্য হয়েছি।
অপরদিকে, থানা থেকে আটক মারুফকে মুক্ত করে ফেরার পথে মারধরের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের তিন নেতা। শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির সামনের ফুটপাতে তাদের মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংগঠনটি।