রাষ্ট্রবিরোধী কাজের প্রমাণ পায়নি পুলিশ, হলে উঠতে পারবেন সেই ঢাবি ছাত্র?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে এক শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি সন্দেহে থানায় দেয় ওই হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। কিন্তু তদন্তের পরে অভিযোগের সাথে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। তবে ছেড়ে দেয়ার পর সেই শিক্ষার্থী এখনও হলে উঠেননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল হোসেন আল মারুফকে থানায় সোপর্দ করা হয়। ‘শিবির ও জঙ্গী’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বিল্লাল হোসেন ওই শিক্ষার্থীকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে থানায় পাঠান।
জানা যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের অফিশিয়াল নোটিশ গ্রুপে (মেসেঞ্জার) তার একটি মন্তব্য লিখে মেসেজ দেন। মারুফ সেখানে লেখেন, ‘সিরিজ বোমা হামলা চালাইছে(চালিয়েছে) জামায়াতুল মুজাহিদিন নামে একটা জঙ্গি সংগঠন, বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত। এই ক্ষমতায় থাকার জন্য যদি দায়ী তারা হয় তাহলে ২০০৮-বর্তমানে গুলশান সহ সকল জঙ্গী হামলার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ।’
আরও পড়ুন: সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দিয়েছে চবি ভর্তিচ্ছুরা
অভিযোগের বিষয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী মেফতাহুল হোসেন আল মারুফ ‘এটা একটি রাজনৈতিক আলাপ থেকে বলেছি, যা ছিল অভ্যন্তরীণ আলোচনা৷ পরে দেখি গ্রুপের একটি স্ক্রিনশর্ট আমাদের হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুলের কাছে কেউ একজন পাঠিয়েছেন৷ এরপর হলের প্রাধ্যক্ষ আমাকে ডেকে নিয়ে বলছেন যে, আমি নাকি রাষ্ট্রবিরোধী ও জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত৷ অথচ এগুলোর কোনোটিই সত্য নয়৷ আমার বিরুদ্ধে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগও দেয়নি৷ আমার মেসেজটি দেখেই দোষী বানিয়ে দিলো৷ কোনো ধরনের তদন্ত না করেই এবং আমার কোনো কথাই না শুনেই আমাকে থানায় পাঠিয়ে দিলো।’
শুক্রবার দুপুরে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, তার বিষয়ে অভিযোগ পাবার পর আমরা তার এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। তার পরিবারের বড় দুই রাজনৈতিক দলের সাথেই সংশ্লিষ্টতা আছে৷ তবে ব্যক্তিগতভাবে তার কোন দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই। সে যে মন্তব্য করেছে এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মতামত। তাই আমরা তদন্তের পরে তাকে একটি মুচলেকা দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।
সেই শিক্ষার্থী আবার হলে উঠার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন শুক্রবার রাতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, হলে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা (বৈধ সিট) দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সে হিসেবে ওই ছাত্র তো হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না। তবে যদি সে হলে থাকতে আসে সেক্ষেত্রে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
সেই শিক্ষার্থী এখন কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে তার মামার বাসায় উঠছে। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে হয়তো সে কিছুদিন থাকবে।
এদিকে, থানা থেকে আটক মারুফকে মুক্ত করে ফেরার পথে মারধরের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের তিন নেতা। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির সামনের ফুটপাতে তাদের মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংগঠনটি।