গুচ্ছে ম্যাথ না দাগিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাবি-রাবিতে কী নিয়ম?

ভর্তি পরীক্ষা
ভর্তি পরীক্ষা   © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ প্রায় শেষ। ভর্তিযুদ্ধ শেষে এখন কেবলমাত্র পছন্দের বিষয় প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা করেছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তবে ভর্তিচ্ছু যুদ্ধ শেষে পছন্দের বিষয় পাওয়াও যেন আরেক মহাযুদ্ধ। এ নিয়েই চিন্তিত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

সম্প্রতি গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল প্রকাশিত হয়। এতেই পছন্দের বিষয় প্রাপ্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মরার ওপর খাঁড়া’ হিসেবে রুপ নিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মিলেনি বিষয়প্রাপ্তির নিশ্চয়তা!  

ঘটনার শুরুটা মূলত গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি থেকেই। এরপর ‘ওএমআর’ এবং ফল প্রকাশিত হলে বাঁধে মূল বিপত্তি। গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল- যে সকল শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে গণিত/বায়োলজি বিষয়ের মধ্যে যে বিষয়টি অপশনাল হিসেবে অধ্যয়ন করেছেন, তারা চাইলে গণিত/বায়োলজির পরিবর্তে বাংলা/ইংরেজি অংশের উত্তর করতে পারবেন। তবে বাংলা/ইংরেজি শুধুমাত্র ৪র্থ বিষয়ের (অপশনাল) পরিবর্তে উত্তর করা যাবে।

তবে ফল প্রকাশের পর থেকেই অভিযোগ উঠে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪র্থ বিষয় বায়োলজি হলেও একাধিক শিক্ষার্থী নিজেদের তৃতীয় বিষয় গণিতের পরিবর্তে বাংলা/ইংরেজি অংশের উত্তর করেছেন। সেই সঙ্গে তারা বায়োলজি অংশের উত্তর করেছেন। যা ভর্তি বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এ নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি কমিটি সুনির্দিষ্টি ব্যাখ্যা না দিলেও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক জানান, ভর্তি পরীক্ষায় কোন বিষয়ে উত্তর করতে হবে আর কোন বিষয়ে উত্তর করতে হবে না, সেটি আমরা ওএমআর শিটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিয়েছি।

এদিকে দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিগুলো বিশ্লেষণেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, স্নাতক প্রথমবর্ষে ভর্তিতে ইঞ্জিনিয়ারিং/ ইঞ্জিনিয়ারিং সমমান বিষয়ে পড়াশোনা করতে ভর্তি পরীক্ষায় ‘গণিত’ প্রশ্নোত্তর করা বাধ্যতামূলক। যা উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ নির্ধারণের শর্তাবলিতেও উল্লেখ রয়েছে।

জানা গেছে, উচ্চমাধ্যমিকে রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, গণিত, বাংলা ও ইংরেজি অধ্যয়ন করা শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবেন। তবে ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর করা বাধ্যতামূলকসহ জীববিজ্ঞান, গণিত, বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো ২টি বিষয়সহ মোট ৪টি বিষয়ে প্রশ্নোত্তর করা প্রযোজ্য ছিল।

আরও পড়ুন : গুচ্ছ কমিটির সমন্বয়হীনতা, ভোগান্তিতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা

এক্ষেত্রে ঢাবির ভর্তি কমিটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদভুক্ত বিষয় পেতে হলে একজন ভর্তিচ্ছুকে অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষায় গনিতে ন্যূনতম সাড়ে ১২ থেকে ১৫ নম্বর পেতে হবে।

অন্যদিকে রাবির ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা পদার্থ বিজ্ঞানে ২৫টি, রসায়নে ২৫টি এবং তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ে ৫টি প্রশ্ন আবশ্যিক বিষয় হিসেবে উত্তর করেছেন। গণিত, জীববিদ্যা ও জীববিদ্যা+গণিত অন্যদিকে ঐচ্ছিকে ছিল, যা থেকে তারা যেকোনো একটি বিষয়ে ২৫টি প্রশ্নোত্তর করেছেন।

রাবির ‘সি’ ইউনিটের শর্তাবলিতেও জানানো হয়, যে সকল ভর্তিচ্ছু আবশ্যিকসহ ঐচ্ছিকে শুধুমাত্র গণিত বিষয়ে উত্তর করবেন, তারা ‘সি’ ইউনিটভুক্ত গণিত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভাগে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে। তবে গনিতে উত্তর না করলে এসব বিভাগে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন না।

অন্যদিকে যে সকল ভর্তিচ্ছু আবশ্যিকসহ ঐচ্ছিকে শুধুমাত্র জীববিজ্ঞান বিষয়ে উত্তর করবেন তারা ‘সি’ ইউনিটভুক্ত জীববিজ্ঞান বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভাগে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন।

এছাড়া যে সকল ভর্তিচ্ছু আবশ্যিকসহ ঐচ্ছিকে গণিত+জীববিজ্ঞান অংশে উত্তর করবেন তারা সব বিভাগে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন।

আরও পড়ুন : গুচ্ছের বি ইউনিটের ফল হতে পারে আজ

এদিকে দেশের আরেকটি স্বায়ত্তশাসিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও যেকোনো বিষয়ে ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে আলাদা আলাদাভাবে নির্দেশনা দেওয়া ছিল।

জাবির গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদ এবং ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট এবং সাবজেক্ট পেতে হলে ন্যূনতম শর্তসমূহ:

অন্যদিকে জাবির জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট এবং সাবজেক্ট পেতে হলে ন্যূনতম শর্তসমূহ নির্ধারিত ছিল_

এ ব্যাপারে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক জানান, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে ম্যাথের উত্তর না করলেও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে পড়া যাবে তাহলে সেটি তাদের নিজেদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করবো না।

তিনি আরও বলেন, ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন। সেখানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির রিকুয়েরমেন্ট কি সেটি উল্লেখ করে দেবেন।


সর্বশেষ সংবাদ