০৩ আগস্ট ২০২২, ১৪:১৭

জাবিতে ছাত্রকে নির্যাতনের পর ৮ ছাত্রলীগ কর্মী অবাঞ্ছিত, কী ঘটেছিল রাতে

নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা  © সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে আবাসিক হলের গেস্টরুমে এক সংবাদকর্মী শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করার করার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিজেরাই নির্যাতনকারীদের নাম জানিয়েছে। ঘটনায় জড়িত ৮ ছাত্রলীগ কর্মীকে তাৎক্ষণিক শাখা ছাত্রলীগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত ওই সংবাদকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীকে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে নিজের ও বন্ধুদের পরিচয় দিতে বলা হয়। এরপর টানা ৫মিনিট তাকে রুমের সিলিং ধরে ঝুলে থাকতে বলা হয়। বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার আগেই ওই শিক্ষার্থী সিলিং থেকে নেমে গেলে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে দিতে জোড়াজুড়ি করে।

একপর্যায়ে তার মোবাইল ফোন তল্লাশী করেতে চাইলে ভুক্তভোগী অস্বীকৃতি জানায়। এতে অভিযুক্তরা তার শার্টের কলার ধরে টানাহেচড়া এবং এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন।

নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রুম থেকে আমাকে হলের গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে আমাকে আমার পরিচয় দিতে বলে। প্রথমবার পরিচয় দিলেও তারা বার বার একই পরিচয় দিতে বলে। হলের গেস্টরুমে দেরিতে আসার কারণ জানতে চায় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। একপর্যায়ে সিলিং ধরে পাঁচ মিনিট ঝুলতে বলে। নির্ধারিত সময়ের আগে নেমে গেলে তারা টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে দিতে বলে। কোমরে ফোঁড়া থাকায় আমি অপারগতা স্বীকার করি। তখন তারা আমাকে লাফাতে বলে।’

ওই শিক্ষার্থী আরো জানান, ‘এরপর আমি মোবাইল তাদের কার্যক্রম রেকর্ড করছি কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা আমার ফোন তল্লাশী করতে চায়। লক খুলে দিতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার শার্টের কলার ধরে টানাহেচড়া শুরু করে এবং এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন।’

এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ঘটনা পর্যালোচনা শেষে অভিযুক্তদের শাখা ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে স্বীকার করে ৮ জনের নাম ঘোষণা করেন। তারা অভিযুক্তদের সংগঠন থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

নির্যাতনকারীরা হলেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসাদ হক ও একই বিভাগের আরিফ জামান সেজান, ৪৭তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান বিন হাবিব, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ্, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের মীর হাসিবুল হাসান রেশাদ এবং ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।

শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত আসাদ হক, আরিফ জামান সেজান এবং জাহিদ হাসান ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতির ঘটনা বর্ণনা করেন। তারা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু সিলিংয়ে ঝুলানো এবং মারধর বিষয়টি অস্বীকার করেন।

আরো পড়ুন: ক্যাম্পাস থেকে হলে ধরে নিয়ে বাইক-ফোন কেড়ে নিল ঢাবি ছাত্ররা

তবে ভুক্তভোগী ওই সংবাদকর্মী শিক্ষার্থীর করা মোবাইল রেকর্ড বিশ্লেষণে ভুক্তভোগীর করা অভিযোগগুলোর সত্যতার মিলেছে। যার একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আজ থেকে এই কর্মীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকুক, তা আমরা চাই না। সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে তারা অবাঞ্ছিত বলে গণ্য হবেন। তারা এই কমিটি থাকা অবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত থাকবেন না এবং আগামী কমিটিতেও তাদের থাকার কোনো সুযোগ নেই। ছাত্রলীগ পরিচয়ে কেউ এরকম ন্যাক্কারজনক কাজ করলে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গায় থেকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপের ব্যবস্থা করেছি। সামনের দিনগুলোর জন্য ছাত্রলীগের নাম নিয়ে চলা ছাত্রদের কেউ এরকম ন্যাক্কারজনক কাজ করলে। সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

ওই ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী বলেন, ‘আমি গতকাল খুব ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়ি। ফলে তাদের ফোন রিসিভ করতে পারিনি। আজ সকালে ঘটনা জেনেছি। ঘটনা বিশ্লেষণ করে দ্রুত দোষীদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’