বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা: ভাড়ায় খাটলেন ঢাবির ছাত্রছাত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এলেই যেন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগে ঢাবির দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তাদেরকে ১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
তবে ঢাবি শিক্ষার্থীদের এমন বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত হওয়া নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রতিবছরই এমন ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এতে করে তারা ঢাকা ঐতিহ্য ও শিক্ষার মানকেও ক্ষুণ্ণ করছেন বলে মনে করছেন নেটিজেনরা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী, ২০১৭ সালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী, একই বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাবির এক শিক্ষার্থীসহ দু’জন আটক হয়েছিলেন।
অন্যদিকে শুধু ভর্তি পরীক্ষায় নয়, বিভিন্ন সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ঢাবির একাধিক শিক্ষার্থী আটক হয়েছেন।
২০১৬ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী দণ্ড পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ঢাবির আইন বিভাগের মোহিত রায় আটক হন। ২০২১ সালে খাদ্য অধিদপ্তর পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে আটক হন ঢাবির ছাত্র হিমেল।
জানা গেছে, রাবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের প্রথম শিফটে মূল পরীক্ষার্থী তামিম হাসান লিমনের পরিবর্তে পরীক্ষায় অংশ নেন ঢাবি শিক্ষার্থী মো. এখলাছুর রহমান। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের ২২২ নম্বর কক্ষ থেকে আটক করা হয়। আটক এখলাছুর ঢাবির সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে রাবির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন।
এদিকে, একই অভিযোগে ঢাবির আরেক ছাত্রীকেও আটক করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা রোল ৬২৮২৮ এর পরীক্ষার্থী মোসা. ইশরাত জাহানের হয়ে প্রক্সি দেন তিনি। আটক ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনিও একই পরিমাণের অর্থের মাধ্যমে প্রক্সিতে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় নেটিজেনরা বিস্তর সমালোচনা করছেন। নেটিজেনরা দাবি করছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুণ্ণ করেছেন। এভাবে পরীক্ষা দেওয়ার কী দরকার ছিল!
অনেকেই দাবি জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত তাদেরকে বহিষ্কার করা। ঢাবি থেকে ছাত্রত্ব বাতিল করা হোক।
নেটিজেনদের একাংশ এমনটাও দাবি করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাড়ায় খাটছেন।
এদিকে জারিফ আহমেদ মিরাজ মন্তব্য করেছেন, ‘এরা রিস্ক নিয়ে কেন এমন করলো এটা খতিয়ে দেখা উচিত। এমনি এমনি তো কারো এটা করার কথা না!’
খাদিজা খাতুন মুন্নি জানান, ‘তারা কি করে যায়, এক্সাম হলে তো সিগনেচার করতে হয়, সেখানে নিজের ছবিই থাকে আবার মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ডও লাগে। রেজিস্ট্রেশন কার্ড না হয় নকল করলো কিন্তু ছবি কিভাবে পাল্টায় তারা।’
বনশ্রী অধিকারী জানিয়েছেন, ‘যে স্টুডেন্টদের গার্ডিয়ান ওদের প্রক্সি দিতে বলেছে স্টুডেন্টসহ তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হোক। টাকার জন্যই তো তারা প্রক্সি দিতে গিয়েছে। গার্ডিয়ানের এত টাকা থাকলে ছেলে/মেয়েকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিলেই পারে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মো. আরাফাত মন্তব্য করেছেন, ‘অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার পূর্বে অপরাধ সংগঠনের আড়ালে কারণগুলো খুঁজে দেখার দরকার, সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট তিনজনকে এক বছরের শাস্তি দিয়ে দিলেন৷ কিন্তু তারা এতো রিস্ক নিয়ে কেনো করতে গেলো সেইটা খুঁজে দেখলেন না?’
তিনি আরও বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটময় মুহূর্তে/পরিস্থিতির শিকার না হলে আমার মনে হয় না তাদের কেউ এতো বড় রিস্ক নিতো, বিচার করার পূর্বে যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে তাদের দেখা উচিত তারা কোটি কোটি টাকা পাচার করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।’