চবি ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে তারা। গত রবিবার রাতে চবি ক্যাম্পাসে বোটানিক্যাল গার্ডেনে এ ঘটনা ঘটে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ এবং হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
এদিকে এ ঘটনায় চবি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগের মধ্যেই শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঘটনায় দোষীদের বিচার এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার রাতে চবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা।
নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনায় গত মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) রাতে হাটহাজারী থানায় বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলাটি দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন সবুজ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনায় অজ্ঞাত ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ধর্ষণ চেষ্টা এবং মারধরের অভিযোগ রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত শুরু করছি।
ওই ছাত্রীর এক সহপাঠী জানান, গত রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন এলাকায় ৫ জন দুর্বৃত্তের হাতে শারীরিক হেনস্তার শিকার হন ছাত্রীটি। ওই সময় তার সাথে থাকা তার বন্ধু বাধা দিলে তাকেসহ ওই ছাত্রীকে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোনও ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগীদেরকে ওই জায়গা থেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ করারও চেষ্টা করে তারা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীর মধ্যে ক্ষোভ, ঘৃণা এবং ভয় ছড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে ছাত্রীদের আন্দোলনে উত্তপ্ত চবি
ক্ষোভ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরা সরকার রুম্পা ফেসবুকে লেখেন, “হেনস্তার শিকার হওয়া বোনটির সাথে ঘটা ঘটনার সাথে চবি ক্যাম্পাসের সকল ছাত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। যে কুলাঙ্গার রা এমন যঘন্য কাজ করতে পারছে ওরা আর মানুষ না, পশু। এরা যতদিন শাস্তি না পাবে ততদিন চবির প্রত্যেকটি মেয়ে অনিরাপদ। জানোয়ার গুলোকে জুতার মালা পরায়ে ক্যাম্পাসে ১০০ পাক দেওয়ানো উচিৎ।
চবির এই হায়নাদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে এ ঘটনার পর ক্ষোভ জানিয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বিচার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন চবির সাবেক শিক্ষার্থীরা। কাজী শামীম হাসান নামে এক প্রাক্তন ছাত্র বুধবার রাতে তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন-”চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে রাতের বেলা তার ই হলের পাশে ৫ জন মিলে বেঁধে তার গায়ের কাপড় খুলে নির্যাতন করে তা মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা যদি ঢাকায় ঘটতো, তাহলে গণমাধ্যমের কাভারেজ কেমন হতো? গণমাধ্যম সব সময় ঢাকা কেন্দ্রিক। নিউজ ভ্যালু তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এছাড়া, কোন কিছু ফেসবুকে ভাইরাল হলে তখন সেটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছে এটা নিয়ে। অভিযুক্ত ৫ জন ছাত্র নাকি খুবই প্রভাবশালী।”
চবির আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী উম্মে সানজিদা জিনিয়া ফেসবুকে লেখেন, ”আহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনও নাই প্রতিবাদ করার…!!??”
আরও পড়ুন: ছাত্রীদের চার দফা মেনে নিল চবি প্রশাসন
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ নামে এক শিক্ষার্থী চবি ছাত্রীদের বিক্ষোভ ও দাবির প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি ফেসবুকে অভিযোগসহ লেখেন, “নিজের ক্যাম্পাসে একটা মেয়েকে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ এবং বহিরাগতরা মিলে মারধর করেছে। অতপর মেয়েটাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করছে। সেই ভিডিও পাবলিক করার ভয় দেখিয়ে মেয়েটাকে র্ধষণ করার চেষ্টা করেছে। ঘটনা এখানইে শেষ নয়, মেয়েটা যখন প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়েছে প্রক্টর তখন অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। একজন নারী শিক্ষক মেয়েটাকে বাসায় নিয়ে রেখে মানসিক সার্পোট দেয়াও অজুহাতে চাপাচাপি করেছে আনঅফিসিয়ালি ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এই ঘটনায় চবি সভাপতিকে বহিষ্কার করতে শোকজ দিয়েছে কিন্তু চবি প্রশাসনকে দেখে মনে হচ্ছে এই নেতাকে রক্ষা করার জন্যই চবি প্রশাসনের র্কতাব্যক্তিরা চাকরি পেয়েছেন।”
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের ভেতরে ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ উঠে। সে ঘটনায়ও বিচার পায়নি ভুক্তভোগীরা।