রাবির হলে হলে ঈদের মাংস বিতরণ করল শিবির
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে চিঠিসহ ঈদের মাংস বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের গার্ডদের নিকট এ মাংস দেয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে জরুরি সভায় বসেন হল প্রশাসন।
জানা গেছে, এদিন সকালে কয়েকজন শিবিরকর্মী ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রদের আবাসিক হলের গার্ডদের নিকট ২-৩ থলে মাংস দিয়ে যান। গার্ডরা জিজ্ঞেস করলে, হাশেম স্যার শিক্ষার্থীদের জন্য মাংস পাঠিয়েছেন বলে তাদের জানানো হয়। এসময় মাংসের সাথে একটি চিঠি ছিল দেয়া হয়। পরবর্তীতে চিঠি খুলে শিবিরের বিষয়টি জানার পর অনেক হলের গার্ড মাংস নিতে আপত্তি জানান। কেউ আবার মাংস শিক্ষার্থীদের না দিয়ে বাইরে বিতরণ করেছেন। বিষয়টি জানা জানি হলে সকালেই প্রাধ্যক্ষদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে অবশিষ্ট মাংস বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
মাংস বিতরণকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রদের জন্য কল্যাণমুখী সব ধরনের কার্যক্রম অংশগ্রহণ করে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসাবে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের পক্ষ থেকে কুরবানি দেয়ার মাধ্যমে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট পাঠানো এ উপহার ভালোবেসে গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সভাসূত্রে জানা গেছে, সকালে শিবির ক্যডাররা ক্যাম্পাসে ঢুকে হলে হলে মাংস বিতরণ করেছে। গার্ডদের মাংসের সাথে চিঠিও দিয়েছে। অনেকে শিবিরের কথা জানতে পেরে মাংস নেয়নি। কোন গার্ড আবার মাংস শিক্ষার্থীদের বিতরণ করেছেন। যে গার্ড মাংস নিয়েছেন, সভা শেষে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সভায় হল ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফেরদৌস মহল বলেন, বিষয়টি জানার পরই প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে সভা করেছি। মাংস গুলো ক্যাফেটেরিয়ার ফ্রিজে রাখা হয়েছে। প্রাধ্যক্ষকে জানানোর আগে হলে বহিরাগত কোন ব্যক্তি কিংবা জিনিস ভিতরে প্রবেশ না করার পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, শিবির একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। ফাঁকা ক্যাম্পাসে তারা নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে এসব কর্মকাণ্ড করেছে। তাদের প্রকাশ্যে আসার কোন ক্ষমতা নেই। তবে যেহেতু হল খোলা রয়েছে, তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ক্যাম্পাসে শিবির কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে করলে সর্বদা তা প্রতিহত জন্য প্রস্তুত রয়েছে শাখা ছাত্রলীগ বলে জানান এ নেতা।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, হলে হলে শিবিরের মাংস বিতরণের খবর পেয়েছি। এ নিয়ে সকালেই হল প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সার্বিক বিষয়ে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান প্রক্টর।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, ঈদে কাউকে উপহার দেয়া অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে দরজায় দরজায় সেটি রেখে যাওয়া উচিত হয়নি। তারা বিষয়টি দেয়ার আগে প্রশাসনকে জানাতে পারত। এখন কোন উদ্দ্যেশে তারা এভাবে মাংস দিয়েছে, তা যথেষ্ট সন্দেহ হবে এটাই স্বাভাবিক। সবার আগে আমার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, তারপর অন্যকিছু। বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ক্যম্পাসে সব ধরণের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে প্রশাসন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এবছর ঈদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা রাখায় ক্যাম্পসেই ঈদ উদযাপন করেছেন ২২৬ শিক্ষার্থী। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে হলেই রয়ে গেছেন তারা।