ঢাবির নিয়োগে ‘কবিপ্রীতি’: পাবলিক আউট, নিয়োগ পেলেন প্রাইভেটের ছাত্রী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক যোগ্যপ্রার্থী থাকার পরও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে। যেখানে প্রার্থী হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাও। ছিলেন ছাত্রলীগেরও একাধিক প্রার্থী।
কিন্তু সেই নারী শিক্ষার্থীর যোগ্যতা— তিনি কবি শামসুর রহমানের নাতনী। আর এই সিলেকশন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। ফলে এই নিয়োগে কবিপ্রীতির অভিযোগ তুলছেন একাধিক প্রার্থী।
সম্প্রতি সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশের প্রেক্ষিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নারী শিক্ষার্থীকে নিয়োগের বিষয়টি গত ২৯ জুন সিন্ডিকেট সভায় পাশ হয়েছে।
জানা যায়, গত মাসে ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের জন্য ৫০ জন প্রার্থী ভাইভা দেন। এই ৫০ জনের মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটে কর্মরত ২৫ জন কর্মকর্তা ছিলেন। ছিলেন ছাত্রলীগেরও একাধিক প্রার্থী। কিন্তু এদের কাউকে নিয়োগ না দিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভাইভাতে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা।
অন্যপ্রার্থীরা অভিযোগ করে জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নারী শিক্ষার্থী প্রয়াত কবি শামসুর রহমানের নাতনী হওয়ায় বাকিদের বাদ দিয়ে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক হারুনর রশীদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এস এম বাহালুল মজনু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীও ভাইভা বোর্ডে ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক প্রার্থী বলেন, এই পদে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই আবেদন করেছেন। এখানে যারা আবেদন করেছেন তাদের সবাই অনেক দক্ষ ও যোগ্য। যেহেতু এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্য শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল।
আরও পড়ুন: বুয়েট-রুয়েট আউট, নিয়োগ পেলেন প্রাইভেটে পড়ুয়া উপাচার্যের মেয়ে
এই শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৪৫ জন প্রার্থী ভাইভাতে অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্যে যাদের নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে রেফারেন্স এসেছে তাদেরকে ছাড়া আর কাউকেই স্যারেরা প্রশ্ন করেনি। তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে বলেছে, তোমার তো বয়স আছে এখানে এসেছো কেন? অন্য কোথাও দেখো, বিসিএস দাও।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ৭৫০ টাকা দিয়ে আবেদন পত্র কিনে প্রার্থীরা ভাইভায় অংশ নিয়েছে। সেখানে এরকম কথা বলার মাধ্যমে বুঝা যায় স্যারদের প্রার্থী ঠিক করা ছিল।
এ বিষয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, এখানে সর্ব সম্মতিক্রমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সবার ভাইভা নিয়েছি। যার ভাইভা ভালো হয়েছে তাকে নেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে কম বেশি করা হয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরকম কোন কিছু হয়নি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ নিয়োগ তো সিলেকশন ও সিনেটে পাস হয়ে গেছে। এখন এটা নিয়ে কি বলবো?