'আঘাতটা আসলে কার মাথায়? শিক্ষক উৎপলের নাকি এই সমাজের?'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ৪১ তম ব্যাচের ছাত্র উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অফিসার্স সমিতির সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ তম ব্যাচের সহপাঠীরা একত্রিত হয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (২৮ জুন) বেলা ১২ টার দিকে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ থেকে র‍্যালি করে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একত্রিত হয় শিক্ষকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে 'আঘাতটা আসলে কার মাথায়? উৎপল দাদার নাকি এই সমাজের?' 'আমার ভাই পরপারে, খুনী কেন বাহিরে?', ' শিক্ষকতা পেশা, ব্যতিক্রমধর্মী নেশা' লেখা  বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিয়াজ মোর্শেদ রিপণ বলেন, হত্যাকারী ওই ছাত্রের বয়স ১৬-১৭ এর কোঠায় ৷ আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি তাকে যেন কিশোর বলে তার অপরাধকে ছোট করে দেখা না হয়। তার শাস্তি অবশ্যই দৃষ্টান্তমলক হতে হবে। 

রাজনীতি বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক বখতেয়ার উদ্দিন বলেন, আমি উৎপল কুমারকে ক্লাসে পাঠদান করেছি। কিন্তু সে দেশের নিপীড়িত শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে গেল। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি এর বিচার নিশ্চিত করা হোক ।  আমি বিশ্বাস করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী এমন কাজ কখনো করবে না। 

রাজনীতি বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আজকে এখানে বন্ধুত্বের টানে দেশের দূর থেকে এখানে এসেছে। এসময় তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে প্রশ্ন করেন, একজন ছাত্র এমন কাজ কিভাবে করতে পারে?

নৃবিজ্ঞানী ড. রহমান নাসির উদ্দিন বলেন, আমদের ভেতরে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা সারাদেশের মানুষের মধ্যে না হলে এটা দুঃখজনক। এই ঘটনা আমাদের  ২০২২ সালে এসেও আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। যে শিক্ষার্থীকে আমি আলোকিত করি,  আন্দোলিত করি তার আমার মৃত্যু হবে এটা কিভাবে মেনে নেওয়া যায়? আমরা সভ্যতার একটি চরম অন্ধকার পর্যায়ে বসবাস করছি যেখানে একজন ছাত্রের হাতে শিক্ষক খুন হওয়ার চিত্র দেখতে হয়েছে। এই ঘটনাকে শুধু সাধারণ একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করলে চলবে না।

রসায়ন বিভগের সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন,  এই খবর শুনে চোখ বেয়ে পানি অজান্তেই ঝরছে। সে আমার অনেক ছোট। কখনো দেখিনি। কিন্তু একজন শিক্ষক হিসেবে এটা মেনে নিতে পারছি না।

রাজনীতি বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এজিএম নিয়াজউদ্দিন বলেন, একজন হত্যাকারীকে শাস্তি দিলেই চলবে না। আমাদের সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে৷ আমরা সব জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। এর বিচার হতেই হবে। 

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ভূঁইয়া মো. মনোয়ার কবির বলেন, একজন ছাত্রের হাতে শিক্ষক হত্যা, এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে? শিক্ষকরা হচ্ছে ছাত্রদের মাথার তাজ স্বরূপ। কিন্তু একজন ছাত্রের হাতে যখন একজন শিক্ষক খুন হন, তখন বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর ড. এনায়েত উল্ল্যাহ পাটোয়ারী বলেন, আমরা ক্লাস বাতিল করে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি একজন শিক্ষক হত্যার বিচারের জন্য।  একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা মানে জাতি লাঞ্ছিত করা। আজকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকদের হেনস্তা করা হচ্ছে, কিন্তু কেন? এর বিচার না হওয়ান পর্যন্ত রাজনীতি বিজ্ঞান পরিবার কর্মসূচী চালিয়ে যাবে। এর বিচার হতেই হবে।


সর্বশেষ সংবাদ