মাঝরাতে ছাত্রলীগের কিল-ঘুষি, রাবি ছাত্রকে হল থেকে নামিয়ে দেয়ার হুমকি!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে মাঝরাতে ছাত্রকে কিল-ঘুষি মেরে বের হয়ে যেতে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৪ জুন) রাতের প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল লতিফ হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী এ অভিযোগ তোলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মুন্না ইসলাম। তিনি আব্দুল লতিফ হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন, আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম এবং তার অনুসারী পারভেজ ও তওহীদ।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, রাত ২ টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা শামীমের কিছু অনুসারী ২৪৮ নম্বর কক্ষে এসে আমাকে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি যেতে না চাইলে তারা জোর করে আমার বিছানাপত্র ও অন্য জিনিসপত্র বাহিরে ছুড়ে মারেন। তারপরেও আমি বের না হয়ে বিছানার উপর বসে পড়লে পারভেজ ও তওহীদ দুজন খুব বাজে ব্যবহার করা শুরু করেন। তারপর তওহীদ নামের ছেলেটি ঘাড় চেপে ধরে টানতে টানতে আমাকে দরজার কাছে আনে এবং পিঠে ২ টা কিল বসিয়ে দেন।
ভুক্তভোগী মুন্না ইসলাম বলেন, গত পাঁচ মাস যাবৎ এখানে আমি আছি। আবাসিকতার কার্ড-ও আছে। অথচ মাঝরাতে এভাবে কক্ষে ঢুকে একজন আবাসিক ছাত্রকে কিল-ঘুষি মেরে হুমকি দেয়ার পাশাপাশি জোরপূর্বক সিট দখল করছে ছাত্রলীগ। এমতাবস্থায় প্রশাসনের নিকট নিরাপত্তা চেয়েছেন এ শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত হল শাখা ছাত্রলীগকর্মী পারভেজ জানান, আমরা মানবিক কারণে তাকে হলের রুমে থাকতে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে সে ছাত্রলীগের সিটে উঠেছে। তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হলে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে। সিরিয়ররা সিট পাচ্ছে না, সেখানে সে কিভাবে থাকে বলে প্রশ্ন তোলেন এ ছাত্রলীগকর্মী। এছাড়া তাকে কোন ধরণের মারধর করা হয়নি বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম জানান, মুন্না নামের ছেলেটা ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এ সেশনের কোন শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারবে না। কিন্তু তার পারিবারিক সমস্যা দিক বিবেচনা করে প্রাধ্যক্ষ সিটে এলোট দিয়েছেন। অন্য আরেকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মীও এলোট প্রাপ্ত। তাই তাকে সিট ছেড়ে অন্য রুমে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। তবে তাকে কোন ধরণের মারধর কিংবা কিল-ঘুষি মারা হয়নি বলে জানান এ ছাত্রলীগ নেতা।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, রাতে বিষয়টি কিছুটা জেনেছি। তাকে সেই কক্ষেই থাকতে বলেছি। সে আবাসিক শিক্ষার্থী, তার সেই কক্ষে থাকার অধিকার রয়েছে।
মারধরের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে মারধর করা হয়েছে এমন অভিযোগ পাইনি। যদি এমনটা ঘটে, তবে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১০ দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেয়াসহ অবৈধভাবে সিট দখল করতে হল গেটে তালা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। হলে ছাত্রলীগের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক প্রাধ্যক্ষ। তবে এবিষয়ে প্রশাসনের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না হওয়ায় হতাশ অনেকে।