রাবিতে সিট বাণিজ্য ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাবিতে সীট বাণিজ্য ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন
রাবিতে সীট বাণিজ্য ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন   © টিডিসি ফটো

আবাসিক হল সমূহে সিট বাণিজ্য, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। সোমবার (১৩ জুন) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

'আবাসিক হলগুলো দখল মুক্ত করো', ‘সিট বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষার্থীদেরকে মুক্ত করো', 'নিয়ম মেনে শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা নিশ্চিত করো', 'সংকট সমাধানে রাকসু নির্বাচন দাও' এমন প্লেকার্ড হাতে দাবি জানান তারা।

ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, আমি নিজেই একজন প্রকৃতই ভুক্তভোগী। হলের বৈধ সিট পেয়েও আমি তিন মাসের মধ্যে হলে উঠতে পারিনি। বর্তমান ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ আবাসিক হলসমূহে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বৈধ সিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে। আমি জানতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদে তারা এই সাহস পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান না করে তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো এবং সকল হলগুলোতে ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিতে বাধ্য হবো।

আরও পড়ুন: বরিশালে কৃষি ইনস্টিটিউটে সিনিয়র-জুনিয়র মারামারি

আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার মূখ্য উদ্দেশ্য আজকে ধ্বংসের মুখে সম্মুখীন যার ফল আমরা ভোগ করছি। বৈধভাবে সিট বরাদ্দ পেয়েও দিনের পর দিন বাহিরে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। হলে অবস্থান না করেও হলের ভাড়া দিতে হচ্ছে তাদের। কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠলেও তাদেরকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরতে গিয়ে মারধর ও নির্যাতন শিকার হতে হয়েছে। অনেকের ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও রুম দখল করে আছে এবং প্রচার সেল, প্রকাশনা সেল রুমে লিখে রুম দখল করে রেখেছে। ফলে একজন হলের মসজিদের ইমামও তার রুম পাচ্ছে না। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, যোগ্যতার ভিত্তিতে সিট বন্টন করুন না হলে ছাত্র-শিক্ষকের আন্দোলন আরো ভয়াবহ হবে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মামুন হায়দার বলেন, শুধু আবাসিকতার কথা বললে হবেনা। শিক্ষার্থীরা ডাইনিংয়ে কি খায় প্রশাসন কি কখনো খোঁজ খবর নিয়েছে? নেয়নি। বিশেষ বিশেষ লোকের জন্য বিশেষ বিশেষ রান্না হয় হলে। প্রভোস্টদের প্রত্যেক বেলা ডাইনিংয়ে খাওয়া উচিত। যখন প্রভোস্টরা হলে খেতে যান তখন খাবারের মান পাল্টে যায়। বাংলাদেশ ছাড়া এমন নিকৃষ্টতম কাজ আর অন্য কোনো দেশে হয় কিনা আমার জানা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বীর মুক্তিযোদ্বা নূর হোসেন মোল্লা বলেন, আমি আমার মেয়ের কাছে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভয়াবহতার কথা শুনেছি। মেয়েদের জন্য সান্ধ্য আইন করা হয়েছে এর পিছনে কারণ কি? এর পিছনে কারন হলো বখাটে ছেলেদের হাত থেকে মেয়েদেরকে রক্ষা করা। ক্যাম্পাসতো বখাটে ছেলেদের জন্য নয়। প্রশাসনের আশ্বাসে ছাত্রলীগের অনেককর্মী বখাটে হয়ে উঠছে। তাদেরকে এখন দমন করতে পারছে না বলে এই সান্ধ্য আইন। দেশে এরকম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার জন্যে আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। আজকের বাংলাদেশ আমাদেরকে হতাশ করেছে।

এসময় অবস্থান কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ আহসান নকিব, অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসাইন,  সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.আখতার মজুমদার, চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সালাম, রয়াসন বিভাগের আব্দুল্লাহ শামসহ এক শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ