চবিতে বেড়েছে স্থানীয়দের ক্ষোভ, নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের দুটি মাধ্যমই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। শুধু সাধারণ শিক্ষার্থীরাই নন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও ভুগছেন এ সমস্যায়। শাটলে পাথর নিক্ষেপ এবং বাসে-সিএনজিতে স্থানীয়দের ক্ষোভ এখন তুঙ্গে।
অভিযোগ উঠেছে আধিপত্য বিস্তারে যখন ক্ষমতাসীনরা ব্যস্ত তখনই স্থানীয় সিএনজি চালক এবং বহিরাগতদের তোপের স্বীকার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সিএনজি চালকরা ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে গায়ে হাত দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের অন্যদিকে বহিরাগতরা নির্বিচারে পাথর নিক্ষেপ করছে শাটল ট্রেনে।
আরও পড়ুন: এটি বৈশাখের শোভাযাত্রা, বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ নয়
১৪ ফেব্রুয়ারী রাতে বহিরাগতদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। এঘটনায় বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী নাজনীন সুরভি প্রশাসনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শাটলে একজন ছাত্রী যৌন হেনস্থার শিকার হলে এর দায় কি প্রশাসনের ওপর বর্তায় না? বহিরাগত প্রবেশ কেন ঠেকাতে পারছে না?
একইদিন অটোরিকশার সাথে শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেলের ধাক্কাকে কেন্দ্র করে ১নং থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় যেন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পেটানো অভিযান। আহত হয় কয়েকজন শিক্ষার্থী। সিএনজি-অটোরিকশা থেকে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে পথিমধ্যে। ছাত্রীদের লক্ষ্য করে অশালীন বাক্য ব্যবহার করছে। স্থানীয়দের এমন ক্ষোভের শিকার তানভীর আহমেদ শরীফ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিনা জানার পর রেল ক্রসিং এলাকায় আমাকে স্থানীয় বেশ কয়েকজন কারণ ছাড়াই মেরেছে।
১১ এপ্রিল সিএনজি ভাড়া বেশি চাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই কর্মীসহ তিন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলক্রসিং এলাকায় পিটিয়েছে স্থানীয় সিএনজি-অটোরিকশা চালকরা। এঘটনায় অটোরিকশার মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করলে ক্যাম্পাসে ধর্মঘট করেন চালকরা। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছায়।
২২ মার্চ আকিভ জাভেদ নামের এক শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় দেয় এক অটোরিকশা চালক। সেটিও ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হওয়ার ফলশ্রুতিতে।
১৬ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইট এলাকায় শহর থেকে ক্যাম্পাস অভিমুখে বাসের ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি হয় পরে একই বাসের ধাক্কায় আহত হয় দুই শিক্ষার্থী। তবে, অপরিচিত নয় এসব ঘটনা, প্রায়ই আলোচনায় আসছে এসব।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অটোরিকশা সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলমের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফেলতির ফলস্বরূপ শাটলে স্থানীয় এবং বহিরাগতদের আনাগোনা হচ্ছে অনেকটা অবারিত। প্রায়ই বহিরাগতদের সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে সম্প্রতি কয়েকদিনে শাটলে বহিরাগতদের পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় কমপক্ষে ১৭ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আহত হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাটলে পুলিশি অভিযান চালালেও বন্ধ হয়নি পাথর নিক্ষেপ। অভিযানের পরেও আহত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: ইউজিসি-গুচ্ছের সমন্বয় করতে দুই সদস্যের কমিটি গঠন
সবগুলো ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। তবে এখনও কার্যকরী কোনো সুরাহা করতে পারেনি প্রশাসন। ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয় গ্রুপের নেতা মো. ইলিয়াস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে টোকাইরা পাথর মারছে, শিক্ষার্থীদের মাথা ফাটছে। সিএনজি অটোরিকশা চালকরাও ছেলেদের মারধর করছে। এসবের কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, শাটলের সমস্যাটা অনাকাঙ্ক্ষিত। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক না। এখানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা রয়েছে। আর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের এমন আচরণের পেছনে কিছু অদৃশ্য কারণ থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইভেট বাস সার্ভিসের চিন্তা রয়েছে যা স্থানীয় অটোরিকশা মালিক এবং চালকদের চিন্তার একটা কারণ হতে পারে। আমরা দ্রুত সমাধান করবো। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের মূল লক্ষ্য।
এনিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমরা সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আগামীকাল বসবো। আমি আপাতত শহরে অবস্থান করছি। ক্যাম্পাসে প্রক্টররা আছেন তারা বিষয়টি দেখছেন।